কুমারীত্বের প্রমাণ এবার প্যাকেটবন্দি। নাম তার ‘আই ভার্জিন পিল’। স্রেফ এক পিলেই শরীরে জমে যাবে পরিমাণ মতো থকথকে ‘নকল’ রক্ত। প্রথম সঙ্গমের পরেই যা সতীচ্ছদ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে ‘মিথ্যে’ কুমারীত্বের ‘প্রয়োজনীয়’ প্রমাণস্বরূপ!
দেশটির আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, অ্যামাজনের এই পণ্য বিক্রির খবর জানতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিশিষ্ট মানুষজন। বিরোধিতায় পিছিয়ে নেই আমজনতাও।
প্রথম শারীরিক মিলনের রাতে মেয়েটিকে রক্তাক্ত হতেই হবে— এ সংস্কার শুধুই তৃতীয় বিশ্বের নয়, বরং অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশই এই ‘ট্যাবু’ বহন করে এসেছে যুগের পর যুগ। কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরপথে। বিভিন্ন সময়ে নানা ধর্মীয় ভাবাবেগ ও কুসংস্কারকে শিখণ্ডী করে এমন প্রথাকে ‘নিয়ম’ বলে দেগে দিয়েছে সমাজের একাংশ।
ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো বটেই, এমনকি শহরে মানুষের কারও কারও মনের মধ্যে ঘাপটি মেরেছিল এমন প্রমাণ দেওয়ার খেলা। সেই খেলা যে অতীতে হারিয়ে যায়নি, তাই কি প্রমাণ করছে অ্যামাজনের এমন পণ্যের কেনাবেচা?
বিষয়টি জানতে পেরে এক প্রতিক্রিয়ায় সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বলেন, ‘অবিশ্বাস ও মিথ্যাচার দিয়ে সম্পর্ক শুরুর হদিসই তো দিচ্ছে এই পিল! কুমারীত্বের প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে বলার পাশাপাশি এই প্রতারণার দিকটিই বা উড়িয়ে দিই কী করে! মেয়েটি বিশ্বাস করছে, কুমারী না হলে ভালবাসা কমবে! ছেলেটি ভাবছে, কুমারী হয়ে ধরা দেওয়াই ভালবাসার প্রাথমিক শর্ত!’
তিনি বলেন, ‘আর কুমারীত্ব? এই হাইমেন এমন একটা জিনিস যা একটা বয়সের পরে যে কোনও কারণে ফেটে যেতে পারে। যৌন সংসর্গে কুমারীত্বের মতো অপ্রয়োজনীয় ও ভিত্তিহীন বিষয়ের সঙ্গে প্রেম, ভালবাসা গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল আজও এই সমাজ করে ভাবলে কষ্ট হয়। অসহায়ও লাগে। অবশ্য এমন ভাবনায় সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিরা থাকলেও আমি অবাক হব না!’
সমাজবিদ বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, এই ধরনের পণ্য আরও এক বার যৌন স্বেচ্ছাচার ও যৌন অধিকারের দ্বন্দ্বে জিতিয়ে দিল পুরুষের স্বেচ্ছাচারী দাবিকে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মৃদুলা হাজরা বলেন, ওষুধের সংস্থা যাই দাবি করুক না কেন, সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এমনটা কখনও বলা যায় না। নকল এই রক্ত শরীরে ধারণ করায় অনেকেরই নানা অ্যালার্জি, সংক্রমণ ও প্রদাহের ভয় থাকে। শরীর অনুপাতে সেই আশঙ্কা বাড়ে-কমে।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো চমকে গেলেন খবরটা শুনেই! ‘সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে কুমারীত্ব এত বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে! পুরনো মানসিকতায় ফিরছি। সম্পর্কের আস্থা কি ঊরুদ্বয়ের মাঝে অবস্থিত! রক্ষণশীল ও ক্ষতিকর মানসিকতার হাত ধরে কৃত্রিম রক্ত নির্মাণ সম্ভব হলেও আস্থার পুনর্নির্মাণ কি সম্ভব?’
খবরটা শুনে হতচকিত হলেও এই ধরনের পণ্য মানসিকতায় খুব অবাক হচ্ছেন না সাহিত্যিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সাফ জবাব, ‘ভার্জিনিটি শব্দটা কি সমাজ থেকে মুছে গিয়েছে? অক্ষত যোনি নিয়ে আদিখ্যেতা শেষ হয়ে গিয়েছে? এ সব কি তলায় তলায় নেই? সব তো আছে। সব ছিলও। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ভাবে বদলাচ্ছে তাতে এ সব যে নতুন করে শুরু হবে আর ডালপালা মেলবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এই সব রিগ্রেসিভ চিন্তাভাবনার যে একটা বিরাট বাণিজ্যিক দিক আছে সেটা ব্যবসায়ী শ্রেণি খুব ভাল করে জানে। আমার মতে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই এই বিপজ্জনক জায়গাটায় হাত দিয়েছে।’