সিজারের সময় মাথা কেটে শিশুর মৃত্যু

বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রসূতির সিজার অপারেশনে শিশুর মাথা কাটা পড়ে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি শিশুটি মায়ের গর্ভেই মৃত ছিল।

শিশুর পরিবারের দাবি, ডেলিভারির আগে চিকিৎসকরা পরিবারকে শিশু মৃত বলে জানায়নি। বুধবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল ও স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের হাফেজঘোনা এলাকার বাসিন্দা পিঙ্কি আক্তারের প্রসব ব্যথা শুরু হলে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশনের পরামর্শ দেন।

পরিবার ও চিকিৎসক উভয়ের সম্মতিতে সিজার অপারেশনের সময় চিকিৎসকের অসতর্কতায় শিশুর মাথা কাটা পড়ে বাচ্চার মৃত্যু হয়। শিশুর মা সুস্থ আছেন।

সিজার অপারেশনের নেতৃত্ব দেন ডাক্তার চিংম্রা। বিষয়টি শিশুর পরিবার এবং এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে জড়ো হন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সদর হাসপাতালে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, সিভিল সার্জন নিজার রঞ্জিত নন্দি, সদর থানার ওসি রফিকুল আলমসহ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক শিশুর বাবাসহ স্বজনদের অভিযোগ শোনেন। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন। তবে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন চিকিৎসক এবং শিশুর পরিবার।

শিশুর বাবা রাজমিস্ত্রি মাহাবুব আলম বলেন, চিকিৎসকের অসতর্কতায় আমার শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যা। চিকিৎসকরা এখন মিথ্যা বলছেন, মায়ের গর্ভে শিশুটি মৃত ছিল। কিন্তু ডেলিভারির আগে তো কথাটি জানানো হয়নি আমাদের। আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থাও তেমন খারাপ ছিল না। আমি সন্তান হত্যার বিচার দাবি করছি।

শিশুর মা পিঙ্কি আক্তার বলেন, আমার গর্ভে সন্তান সুস্থ ছিল। সিজারের সময় শিশু মারা গেছে। ডাক্তারের অসতর্কতায় বাচ্চার মাথা কাটা পড়ে আমার সন্তান মারা গেছে। কিন্তু তারা এখন মিথ্যাচার করছে বাচ্চা মৃত ছিল। আমি সঠিক বিচার চাই।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিল কামরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমার ওয়ার্ডের হাফেজঘোনার বাসিন্দা তারা। ডেলিভারির আগে শিশুর পরিবার সুস্থ বাচ্চা নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এখন চিকিৎসকরা বলছেন শিশুটি গর্ভেই মৃত ছিল। তা হলে কথাটি চিকিৎসকরা পরিবারকে আগে জানায়নি কেন। সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও রেজাউল হায়দার ও মেডিকেল অফিসার মো. সাজ্জাতুল আমিন বলেন, প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. চিংম্রা। তাদের দাবি, বাচ্চাটা মায়ের পেটেই মৃত ছিল।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়ায় যন্ত্র দিয়ে টেনে বের করার সময় বাচ্চার মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু মায়ের ঝুঁকি কমানোর জন্য মৃত বাচ্চা প্রসবের জরুরি হয়েছিল। এটা স্বাভাবিক বিষয়। চিকিৎসকদের কোনো ত্রুটি ও অবহেলা ছিল না।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিষয়টি তদন্ত করবেন।

সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দি বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় নয়; শিশুটি মায়ের পেটেই মৃত ছিল। শিশুর মাকে সুস্থ রাখতে অপারেশন করে শিশুকে বের করা হয়। তার পরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।