বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় মুখ খুলছে আজ

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টিউব স্থাপনের কাজ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে শুক্রবার (৮ অক্টোবর)। টিউব স্থাপনের কাজ শেষ হলে শুক্রবার মধ্যরাতেই দুটি টিউবের উভয়মুখী মুখ খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে নদীর তলদেশ দিয়ে উভয়প্রান্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গাড়ি চলাচল করতে পারবে। তবে শতভাগ কাজ শেষ করে সর্বসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য উপযোগী হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য গণমাধ্যমে জানান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী।

জানা যায়, শুক্রবার (৮ অক্টোবর) মূল টানেলে বিপরীতমুখী দুটি টানেল নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে। এর মাধ্যমে এই প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হবে। পরবর্তীতে টিউবের ভেতরে সড়ক নির্মাণ এবং কর্ণফুলী নদীর উভয় প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করে বাকি ২৭ শতাংশ কাজ শেষে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলের ভেতর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। কোনো ব্যয় না বাড়িয়েই ডিসেম্বরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালক জানান, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে নদীর ওপারে আনোয়ারা পর্যন্ত একটি টিউব স্থাপন শেষ হয় গত বছরের নভেম্বরে। পরে ডিসেম্বরে শুরু হয় দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজ। যা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (৭ অক্টোবর)। আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজ শেষ হলে শুক্রবারই দুটি টিউবের উভয়মুখী ৪টি মুখ খুলে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দুটি টিউবের ভেতর দিয়ে প্রকল্প কাজে নিয়োজিতরা এপার ওপার চলাচল করতে পারবে। ইতিপূর্বে স্থাপন শেষ হওয়া প্রথম টিউবের ভেতর দিয়ে চলছে পিচ ঢালা সড়ক নির্মাণের কাজ। শুক্রবার স্থাপন শেষ হওয়ায় পর দ্বিতীয় টানেলেও সড়ক নির্মাণ শুরু হবে। দুটি টিউবে নির্মিত হবে ৪ লেনের সড়ক।

হারুনুর রশিদ বলেন, চীনের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসেই টানেলের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত প্রথম টিউব স্থাপন কাজ শেষ হয়। ঠিক এক বছর সময়ের আগেই দ্বিতীয় টিউবও স্থাপন শেষ হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ থাকলেও বর্তমানে কাজে বাড়তি জনবল নিয়োগ করা হয়েছে এবং অত্যাধুনিক নানা যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে কাজের গতি বেড়েছে। প্রকল্পের কাজ ২৪ ঘণ্টাই চলছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, টানেলকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক এবং টানেলের ভেতরের সড়ক হবে মোট ৪ লেনের। এর মধ্যে ওয়ান ওয়ে একটি টানেলে সড়ক থাকবে দুই লেনের।

একটি টিউবের সড়ক দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী এবং অন্য টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অভিমুখী যানবাহন চলাচল করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রতিটি টিউব চওড়া ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অন্য টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪০০ মিটার।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের কমিউনিকেশন এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টানেল নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করছে।