রাতে আশুলিয়ার বাইপালে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছিল আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের দুটি বাস। একটির ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছিল ফেরদৌস হোসেন (১৩) এবং অন্যটিতে শাহপরান হৃদয় (১৪) ও নুরুল ইসলাম (১৫)। ওরা তিনজনই বন্ধু। ফেরদৌস ও নুরুল আশুলিয়া ক্লাসিক বাসের হেলপার। আর হৃদয় হেলপার একটি ট্রাকের।
গত রবিবার মধ্যরাতে ঘুম ভাঙলে হৃদয় টের পায়, তার পকেটে রাখা ৫০০ টাকা নেই। পাশে থাকা নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, নিশ্চয় এই টাকা ফেরদৌস চুরি করেছে। দুজনে মিলে অন্য বাস থেকে ফেরদৌসকে ডেকে নিজেদের বাসে এনে বলে, সে হৃদয়ের টাকা চুরি করেছে। ফেরদৌস অস্বীকার করে বলে, ‘ওই টাকা নুরুল চুরি করেছে। কারণ আমি অন্য বাসে ঘুমাচ্ছিলাম।’
এতে ক্ষিপ্ত হয় নুরুল। দুজনে মিলে ফেরদৌসের পকেটে থাকা ১৫০ টাকা নিতে টানাহেঁচড়া করে। ফেরদৌস বাধা দিলে নুরুল ও হৃদয় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বাসে রাখা লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারায় ফেরদৌস। পরে হৃদয় ও নুরুল ফেরদৌসকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাত ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে নুরুল ও হৃদয়কে ফেরদৌসের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, ফেরদৌস রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েছে। এতে সন্দেহ হলে খবর দেওয়া হয় হাইওয়ে পুলিশকে। হাইওয়ে পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে খবর দেয় আশুলিয়া থানা পুলিশকে। ততক্ষণে নুরুল সটকে পড়ে। পুলিশ এসে আটক করে হৃদয়কে। সোমবার সকালে পুলিশ নিহত ফেরদৌসের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পরে বিকেল ৩টায় আশুলিয়ার শ্রীকণ্ডি থেকে নুরুলকে আটক করে পুলিশ।
নিহত ফেরদৌস শেরপুর জেলার সদর থানার মুন্সীপাড়া গ্রামের বাসচালক রইচ উদ্দিনের ছেলে। আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ বালুর মাঠ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকত সে। হৃদয় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার চরপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ সাহেব আলীর ছেলে। নুরুল ইসলাম জয়পুরহাট সদর থানা হানিয়ামুণ্ড গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
নিহত ফেরদৌসের বড় বোন রুবিনা বেগম জানান, ৫০০ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ফেরদৌসের পকেটে থাকা ১২০ টাকা ছিনিয়ে নিতে চায় ওরা। বাগিবতণ্ডার এক পর্যায়ে নুরুল ও হৃদয় তাকে মারধর করে গলা চেপে ধরে। এ সময় বাসে থাকা লাঠি দিয়ে ফেরদৌসের মাথার পেছনে আঘাত করে নুরুল। গুরুতর আহত অবস্থায় হৃদয় ও নুরুল ফেরদৌসকে গণস্বাস্থ্য হাতপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুলিয়ার থানার এসআই সামিউল ইসলাম বলেন, হৃদয় ও নুরুলকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার তথ্য পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেছে।