চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা বেড়েছে ৬ শতাংশ। জ্বালানি পণ্যটির এমন চাহিদা বৃদ্ধির ঘটনাকে জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকি মোকাবেলায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) এক প্রতিবেদনে এমনটা দেখা যায়। কয়লার চাহিদা বৃদ্ধির এমন চিত্রের ফলে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়তে পারে। ২০২২ সালে কয়লার চাহিদা যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে বলেও সতর্ক করে আইইএ। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
চলতি বছরে কয়লা চাহিদা বৃদ্ধির ফলে অক্টোবরে জ্বালানি পণ্যটির দাম যেকোনো সময়ের সর্বোচ্চে পৌঁছে। কভিড-১৯-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর আগে গত বছর মহামারীকালীন অর্থনৈতিক স্থবিরতার ফলে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছিল।
আইইএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে কয়লার চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন স্তরে সরবরাহ সংকটের দরুন ধাতুপণ্যটির দামও বাড়তে থাকে এ সময়। এ সময় চীন ও ভারতে কয়লা সংকটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। ফলে এ পণ্য দুটির দামও কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ স্তর স্পর্শ করে। ফলে নিজেদের অভ্যন্তরীণ নীতি অনুযায়ী ঘাটতি কমিয়ে আনতে কয়লার উৎপাদন বাড়াতে থাকে চীন। উৎপাদনে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো এ সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
আইইএ প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ছাড়াও সিমেন্ট ও ইস্পাত উৎপাদনে ধাতুটির ব্যবহার চলতি বছরে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। এ সময় ২০২১ সালের জন্য কয়লার বৈশ্বিক চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টন। এ পরিমাণ চাহিদার ফলে ২০১৩-১৪ সালে ধাতুটির চাহিদা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ বিন্দু অতিক্রম করবে না বলেও জানায় আইইএ। এ সময় পরিবেশ পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকেও দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেয়া হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, ২০২২ সালে কয়লার ব্যবহার যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে। পাশাপাশি পরবর্তী দুই বছর সর্বোচ্চ চাহিদার এ চিত্র বহাল থাকতে পারে বলেও জানায় আইইএ। কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে দ্রুত ও শক্তিশালী নীতি প্রণয়নের জন্যও তাগিদ দেয় আইইএ।
প্রতিবেদনে আইইএ জানায়, চলতি বছর কয়লার চাহিদায় শক্তিশালী পুনরুদ্ধার পণ্যটিকে নতুন রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কয়লার চাহিদা কমে আসার পর চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার ৯ শতাংশ বাড়তে পারে, যা যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। এ সময় কয়লা বিদ্যুতের পরিমাণ ১০ হাজার ৩৫০ টেরাওয়াট ঘণ্টা দাঁড়াতে পারে বলে জানায় আইইএ। চলতি বছর তাপ কয়লার চাহিদা ধাতব কয়লার তুলনায় বহু গুণ বেড়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি। আইইএ ধারণা করেছিল এ সময় তাপ কয়লার চাহিদা দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে এবং এর ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ১১০ কোটি ৬০ লাখ টনে।
বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের সবচেয়ে বড় কারণ কয়লা। চলতি বছর যেকোনো সময়ের তুলনায় আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল জানান, কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী নিট জিরো নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হুমকি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকারগুলো দ্বারা শক্তিশালী এবং তাত্ক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ ব্যতীত লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে স্বচ্ছ, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করার সম্ভাবনা খুবই কম।