হেরন পাখিদের প্রতি
অনেকগুলা শরৎকাল ক্ষয় হয়ে গেছে
আমি টের পাই, আমি টের পাই—বুকের
ভিতর থেকে কিছু নরম কাঁশফুল উড়ে
চলে যাচ্ছে বেলকনির সীমানা ছাড়ায়ে…
কাঁশফুলের দীর্ঘশ্বাসগুলা মেয়ে মানুষের
স্তনের মতন এত কোমল অন্ধকার ছেড়ে
কার কাছে যায়, কোথায় যে যায়—এই
সব ভাবনা ভেবে ভেবে, আরো কিছু
নির্জীব শরৎকাল আমাদের অতিক্রম
করতে থাকে। শীত নেমে আসতে থাকে…
শীত শীত অনুভূতি নিয়া আমরা অফিসে
যাই, অফিসকর্ম করি, জাহাঙ্গীরনগরের
দিকে কি আরো বেশি মৃদু-মন্দ বাতাস
বইতে থাকে? আরো হালকা দোলাচাল?
কোনো লেকে কি একটা বা দুইটা পাখি
আগে আগে ওড়ে এসে জায়গা দখলের
ফন্দি করছে? অথবা মাদানী এভিনিউ
ধরে ভাটারার দিকে যেতে থাকলে, এই-
ভাবে যেতে যেতে সাতারকুল, এক নম্বর
ব্রিজ, তারপর দু’ নম্বর, তারপর আরো
দূরে গিয়ে বালু খাল পার হয়ে নাম না
জানা কোনো এক গ্রামের দিকে যাত্রা
করতে করতে কি আমাদের নিজেদের
কথা মনে পড়ে? ধূসর শরৎকালগুলা?
আদৌ এইসব কুয়াশাচ্ছন্ন বিকালবেলা
পৃথিবীর মানুষের কাছে ছিল কিনা—
এই রকম অসংখ্য উদ্ভট সন্দেহ নিয়া
পৃথিবীটা নিজেই নিজের মুখোমুখী হয়,
ঝগড়াঝাঁটি করে—দিনশেষে তবুও হিসাব
মিলাতে পারে না, একঝাঁক নিশাচর
হেরন হিমালয়ের পাশ ঘেঁষে ওড়ে আসতে
থাকে আমাদের দিকে। আমাদের তখন
শীতকালের কথা মনে পড়ে, বিরান
শীতের রাত আর নির্ঘুম হেরনগুলা
পৃথিবীর পথ ধরে হেঁটে হেঁটে আমাদের
শীতকালীন ফসলের ক্ষেতের উপরে
আসে, শুধু নরম নরম কাঁশফুলগুলা
আর থাকে না কোথাও, কোথায় যেন
যেতে থাকে, ধবল অন্ধকারের সাথে…