অভাবের তাড়নায় পতিতাবৃত্তিকেই বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজিয়া বেগম। বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ ছিল তার মেয়ে। তাছাড়া রাস্তায়, এক বেলা না খেয়ে কোনরকমে দিন কাটছিল। নিঃস্বার্থভাবে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। যখন কেউ এসেছে তাঁর বিনিময়ে কিছু না কিছু রাজিয়াকে দিতে হয়েছে।
তাই একমাত্র মেয়েকে খাওয়াতে বেছে নিয়েছিলেন পতিতাবৃত্তিকেই। প্রতি রাতে ছোট ফুটফুটে মেয়েকে বাড়িতে রেখে বেরিয়ে পড়তে হত তাকে। মেয়ে শুধু একটাই কথা জিজ্ঞাসা করত “এত রাতে কেন কাজে যাচ্ছ আম্মা?” উত্তরে বিশেষ কিছুই বলতে পারতো না। শুধু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা কথাই আসতো, “আমার এতো রাতে কাজ করতে যেতে ভালো লাগে না।”
কিন্তু একদিন রাজিয়ার দেখা হল এক ভিক্ষুকের সঙ্গে। সেদিন খুব বৃষ্টিও পড়ছিল। গাছের তলায় ভিজতে ভিজতে চিৎকার করে কাঁদছিলেন রাজিয়া। নিজের জমে থাকা দুঃখ ঝরে পড়ছিল বৃষ্টির জলের সঙ্গেই। সেই গাছের উল্টোদিকেই ছিলেন সেই প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আব্বাস। এর পরে ওই ভিক্ষুক রাজিয়ার নজর কাড়ার জন্য জোরে কাশলেন। রাজিয়ে ভেবেছিলেন আব্বাস টাকা চাইছে। সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর কাছে কোনও টাকা নেই।
কিন্তু উল্টোটা ঘটল। আব্বাস রাজিয়াকে ৫০ টাকা দিলেন। সঙ্গে সাবধান করে বললেন যে ঝড় আসছে আর তাঁর বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। এই বলে হুইল চেয়ারে করে চলে গিয়েছিলেন আব্বাস। সেই প্রথম রাজিয়াকে নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ সাহায্য করেছিল। সেই প্রথম রাজিয়া কাউকে ভালোবেসেছিলেন।
রাজিয়া আর আব্বাস এখন চার বছরের বিবাহিত জীবন যাপন করছেন। আব্বাসকে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী প্রতিবন্ধকতার জন্য ছেড়ে গিয়েছিলেন। আর সেই প্রতিবন্ধকতাকেই ভালোবাসার সঙ্গে আগলে নিয়েছিলেন রাজিয়া।