বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমদানি তুলনায় রপ্তানি আয় না হওয়া বৈদেশিক পণ্য বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ৭০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন ও ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৪৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সমেয়ের তুলনায় রপ্তানি এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত এ হার ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রন্তিকে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৯৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৩২৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে) দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ঘাটতির এ অংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৮৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ঘাটতি কিছুটা কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বরে এসে তা (-) ঋণাত্মক হয়ে গেছে। প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিকে জোগান দিতে হচ্ছে। এতে করে আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, সেই হারে রপ্তানি আয় হয়নি। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল।
এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তিন মাসে প্রবাসীদের আয় রেমিট্যান্স এসেছে ৪৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ ও নিট বেড়েছে ৭ দশমকি ১৮ শতাংশ। একই সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।