এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে দেড়শ টাকা গুণতে হলেও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছেন, পেঁয়াজের বাজার ‘নিয়ন্ত্রণে’ চলে এসেছে।
মাসখানেকের বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম চলার মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিষয়টি তোলেন বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী এ দাবি করেন। তিনি বলেন, “ভারতে হঠাৎ বন্যার কারণে আমাদের পেঁয়াজের বাজার গরম হয়ে যায়। এ সময় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিও বন্ধ করে দেয়। তবে আমরা অতিসত্ত্বর তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি।”
উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ার কারণে এই সময়ে পেঁয়াজের সঙ্কট থাকে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন বলেন, “এই সিজনটি একটি ‘লিন’ সিজন। এ সময় একটা সঙ্কট থাকে। আমাদের নতুন পেঁয়াজ এখনও উঠেনি। কিছু দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে আমদানির ব্যবস্থা করেছি। ভারত থেকেও আমদানি চালু হয়েছে।
“পেঁয়াজের বাজার যেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে। এছাড়া কোথাও যেন বেশি দামে কেনা-বেচা না হয় তা তদারকিতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে।”
জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী যখন এই কথা বলেছেন, তখন ঢাকার মগবাজারের পেয়ারাবাগে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। মীনা বাজারের মগবাজার শাখায় সোমবার ১৪৪ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের মুখে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেন ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা।
মিশর, তুরস্ক ও চীন থেকে আনা পেঁয়াজের কেজি সর্বোচ্চ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এতে ঢাকায় পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরবে বলে শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আশার কথা শোনালেও এখনও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। অধিকাংশ জায়গায় আমদানি করা কম দামের ওই পেঁয়াজের দেখাই মিলছে না। আর যেসব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও চড়া দাম চাওয়া হচ্ছে।
হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আনোয়ার হোসেন খানের লিখিত প্রশ্নোত্তরে বাণিজ্য মন্ত্রী জানান, দেশের বার্ষিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে উৎপন্ন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩১ লক্ষ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট না হওয়ায় বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশ বেড়েছে।
রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য টন প্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়।
এ প্রসঙ্গ তুলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য যেখানে প্রতি মেট্রিক টন ২৫০-৩০০ ডলার ছিল, এ সিদ্ধান্তের ফলে তা ৮৫০ ডলারে দাঁড়ায়। এতে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। ভারতের স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।”
তিনি জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রিসহ তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি
বগুড়া-৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, সার্কভুক্ত সাতটি দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশগুলোতে রপ্তানি হয় এক হাজার ৪০৮ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময় আমদানি হয় আট হাজার ৩৯৬ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঘাটতি ছয় হাজার ৯৮৮ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি সাত হাজার ৭৪৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাকিস্তানের সাথে ৪৭১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার, ভুটানের সাথে ২৭ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার, শ্রীলঙ্কার সাথে ১৬ দশমিক ২০ ডলার, মালদ্বীপের সাথে ১২ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার এবং আফগানিস্তানের সাথে দুই মিলিয়ন ডলার।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প থেকে অর্জিত হয়।
সংরক্ষিত আসনের নাজমা আকতারের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, দেশের (২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বিবিএস প্রাক্কলিত) ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যা হিসেবে দেশে মোট চালের চাহিদা দুই কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন ও গমের চাহিদা ১১ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিন টন। এ সময়ে প্রাক্কলিত উৎপাদন চাল তিন কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ও গম ১১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন।
“ফলে বলা যায়, দেশে সার্বিকভাবে চালের ঘাটতি নেই। তবে গমের ঘাটতি রয়েছে।”
বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। দিনের কার্যসূচির শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।