পতনের মধ্যদিয়ে সপ্তাহ পার স্টক এক্সচেঞ্জের

পতনের মধ্যদিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করল দেশের শেয়ারবাজার। বড় ধরনের পতনের কবলে গত সপ্তাহে মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয়ই কমেছে। সেইসঙ্গে কমেছে বাজার মূলধন। এমন পতনের বাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখায় ভালো কোম্পানি বা ‘এ’ গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠান। বাজারটির মোট লেনদেনের ৯৯ শতাংশই রয়েছে এই গ্রম্নপের দখলে।

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের তিন কার্যদিবসই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। কিন্তু দুই কার্যদিবসে বড় দরপতন হওয়ায় সপ্তাহ শেষে পতনের খাতায় নাম লিখিয়েছে শেয়ারবাজার। পতনের বাজারে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৭টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দাম।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের কারণে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো ২১ হাজার কোটি টাকা।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ২৬১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমলো ৩১০ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে পতন হয়েছে ডিএসই শরিয়াহ্‌ সূচকের। সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৬৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

রধান ও শরিয়াহ সূচকের পতন হলেও ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এ সূচকটি বেড়েছে দশমিক ২২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৯৯ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এদিকে দরপতনের সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ২৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৩২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এই লেনদেন খরার বাজারে ডিএসইতে মোট লেনদেনের মধ্যে ‘এ’ গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘বি’ গ্রম্নপের অবদান দশমিক ৩১ শতাংশ। ‘জেড’ গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রম্নপের অবদান ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এডিএন টেলিকমের শেয়ার লেনদেন হয় ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। ৫০ কোটি ১৪ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, নর্দান জুট, রিং সাইন টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপয়ার্ড।