দুর্নীতি ঢাকতে ইসলামী ইন্সুরেন্সের ড্রাইভারকে শোকজ

অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে এবার ড্রাইভার বাবু মিয়ার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোকজ নোটিশ জারি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড।
অভিযোগ উঠেছে, সিইও আব্দুল খালেক মিয়ার পর এবার তার গাড়ি চালক বাবু মিয়াকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে বাবু মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং তার আগস্ট ২০২৫ মাসের বেতন এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ইভিপি চৌধুরী এহসানুল হক স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর বাবু মিয়াকে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, তিনি ১৪ আগস্ট ২০২৫ থেকে কর্মস্থলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও তিনি সাড়া দেননি বলে দাবি করা হয়।
চিঠির প্রেক্ষিতে বাবু মিয়া ৮ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত জবাব জমা দেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, তিনি নিয়মিতভাবে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ড্রাইভারের দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি আরও জানান, আগস্ট মাসের বেতন এখনও পাননি, যার ফলে তিনি আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
এদিকে কর্তৃপক্ষ বাবু মিয়ার ব্যাখ্যা যাচাই করতে ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় তাকে প্রমাণসহ প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার মোঃ রিজওয়ান-উস-সাদেকীনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বাবু মিয়াকে সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়া হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হলে- অনুপস্থিতিতেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
বাবু মিয়ার দাবি, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ এবং তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি ন্যায়বিচারের আশায় আছেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া বেতন পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সিইও আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ড্রাইভার বাবু মিয়া এখনও আমার গাড়ির চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। তবে আমি ছুটিতে থাকাকালীন অবস্থায়- এধরণের শোকজ নোটিশ কিংবা তদন্ত কমিটি করার কোন সুযোগ নেই। এডমিনের একজন সাধারণ কর্মকর্তার এ বিষয় চিঠি ইস্যু করা অনিয়মতান্ত্রিক, অবৈধ। আমাকে না জানিয়ে, এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার চরম বেয়াদবির বহিঃপ্রকাশ। এতে করে ইসলামী ইন্সুরেন্সে বিশৃঙ্খলা আরো বাড়বে। একজন ড্রাইভারকে নিয়ে এ ধরণের তদন্ত কমিটি গঠন- বীমা খাত সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে প্রতিষ্ঠান জুড়ে। এখানে আইনের শাসন না থাকায় সবাই সুযোগ গ্রহণ করছে। আমি এই অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে আগ্রহী হলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। যাঁর ধারাবাহিকতায় আমার পাশাপাশি ড্রাইভারকে নিয়েও প্রতিষ্ঠানের একটি পক্ষ নোংরা খেলায় মেতেছে। এখন অবৈধভাবে আমাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
উল্লেখ্য, এর আগে একইভাবে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও আব্দুল খালেক মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও তদন্তের চিঠি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সিইও হিসেবে প্রায় দু’বছর দায়িত্ব পালন করার পর খালেক মিয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে অপসারণ করে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স।
তবে, আব্দুল খালেকের অপসারণকে অবৈধ ঘোষণা করে আইডিআরএ।
এ বিষয় জানতে ইসলামী ইন্সুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত সিইও মো. মইনুল আহছান চৌধুরী এবং মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ইভিপি চৌধুরী এহসানুল হককে ফোন করা হলে ফোন রিসিভ করেননি।
– কোন পথে সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান ইসলামী ইন্সুরেন্স?
একের পর এক বীমা আইন লংঘন, পরিচালনা পর্ষদে দ্বন্দ্ব, প্রশাসনিক কাঠামোতে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের ভয়ংকর চিত্র নিয়ে থাকবে ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে- দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড মইনুল আহছান এখন ইসলামী ইন্সুরেন্সের সিইও!