‘বীমা খাতে দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে কমিশন নয়, বেতন প্রয়োজন’

 

আদম মালেক : বীমা খাতে জনশক্তির দক্ষতা নিয়ে অসন্তোষ পুরনো। দক্ষতা বাড়াতে খাতসংশ্লিষ্টদের অনেকে কর্মীদের শুধু প্রশিক্ষণের ছবক দিয়ে থাকেন। কিন্তু দক্ষ জনশক্তির জন্য প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। ভালো লেখাপড়া জানা ছেলেমেয়েরা শুধু কমিশনে বীমা পেশায় আসতে চায় না। তাই কমিশনের পাশাপাশি বেতন দিলে দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন জীবন বীমা খাতের কোম্পানী জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এস এম নুরুজ্জামান।

জাতীয় অর্থনীতি বিষয়ক অন-লাইন নিউজ পোর্টাল অর্থবাংলাডটকমের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে বীমা শিল্পের চলমান অবস্থা, সংকট এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা হয়। আলোচনা হয় চতুর্থ প্রজন্মের বীমা প্রতিষ্ঠান জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর কর্মকান্ড নিয়ে।পুরো সময় সাথে ছিলেন সিনিয়র রিপোর্টার আদম মালেক।

ড. এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা খাতে সবচেয়ে বড় অভাব হলো দক্ষ জনশক্তির। এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে আমাদের সবাইকে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। বিশেষ করে দেশে অ্যাকচুয়ারি সংকটের কারণে অনেক সময় নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে সময়ক্ষেপণ হয়। তাই অ্যাকচুয়ারি বাড়ানো দরকার, যা বাংলাদেশে নেই। এজন্য বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও বিশেষ ভুমিকা নিতে হবে।  একইসাথে নিজ প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে বললেন এই তরুন বীমা ব্যক্তিত্ব। জানালেন স্বপ্ন সুন্দরের কথা, চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিষ্ঠান জেনিথ ইসলামী লাইফ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরীর পাশাপাশি তাদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চত করতে সচেতন হয়ে কাজ করছে। একঝাঁক প্রশিক্ষিত তরুন তৈরী করছে জেনিথ লাইফ, যারা আগামীর বাংলাদেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক হবে।

সম্ভাবনার পাশাপশি কিছু সমস্যার কথাও উঠে আসে তাঁর মুখে। বলেন, অনেক কোম্পানি যথাসময়ে বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। এতে শুধু ঐ বীমা কোম্পানীই নয় পুরো খাতের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বীমা খাতে শিক্ষিত জনশক্তির অংশগ্রহণ বাড়াতে বীমা খাতের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানি এসেছে। প্রতিযোগিতা বেড়েছে। পাশাপাশি নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে আসতে হবে।

 

বললেন, দাবি পরিশোধ করে না এমন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর এক ধরনের দুর্নাম আছে। অনেকের জন্য এটা সত্য সবার জন্য নয়। এ দুর্নাম ঘোচাতে হবে। যারা দাবি পরিশোধ করে না তাদের বাধ্য করতে হবে পরিশোধের জন্য। আর সাধারণভাবে যাতে খুব দ্রুত দাবি শোধ যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। ২০১৪ সালে জাতীয় বীমা নীতিতে এ খাতের সমস্যাগুলোকে খুব সুন্দর করে চিহ্নিত করা হয়েছে। কীভাবে সমাধান করতে হবে, কারা করবে, কতদিনের ভেতর করবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবার সক্রিয় ভূমিকা থাকলে বীমা খাতের চেহারা বদলে যাবে। এ খাতে প্রচারণার অভাবও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এ খাতে জনগণের নজর কাড়তে সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচারণা বাড়াতে হবে।

চায়ের চুমুঁকে আলোচনার ফাঁকে আবারো চলে আসে জেনিথ প্রসঙ্গ। বললেন, নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। জেনিথ লাইফ সবসময় কোয়ালিটিফুল ব্যবসা এবং সেবার কথা মাথায় রেখে কাজ করে। বিশেষ করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে যে এক ধরনের দুর্নাম আছে, সে দুর্নাম মুক্ত থাকতে শতভাগ সচেষ্ট, আর এ কারণেই জেনিথ লাইফ বেষ্ট বীমা প্রতিষ্ঠান হবে- যোগ করলেন, ড. এস এম নুরুজ্জামান।

বেকারত্ব দূরীকরণে বীমার ভূমিকা ও সম্ভাবনা সম্পকে তাঁর পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দেশে ৪ কোটি মানুষ বেকার। বাংলাদেশে বীমার বিশাল ক্ষেত্র। সরকার আরও আন্তরিক হলে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব।

যুগোপযোগী বীমা খাত গড়ে তোলার উপায় তিনি গভীর মনযোগের সঙ্গে দেখেছেন। জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, একুশ শতকের প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, তারা ঘরে বসেই সব সেবা পেতে চায়। এই প্রজন্মের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের বীমা শিল্পকে তথ্যপ্রযুক্ত সমৃদ্ধ করা উচিত। গড়ে তুলতে হবে কাগজবিহীন বীমা পলিসি। ডিজিটাল বীমা স্টাম্প এবং ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর চালু হলে পলিসি ডকুমেন্ট পেপারলেস করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস এবং এটি ডিজিটালি বীমা পলিসি গ্রহণকে আরো ত্বরান্বিত করবে। তাছাড়া চালু করতে হবে ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ, বরাদ্দ রাখতে হবে অর্থ । এজন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের লোকবলের ঘাটতি পূরণ জরুরী, মন্তব্য তাঁর।

বীমা খাতে বেশী খরচ এড়াতে তাঁর বক্তব্য হলো, বীমার কমিশন ছয় ক্যাটাগরির কর্মীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে। ফাইন্যান্স অ্যাসিসটেন্স, ইউনিট ম্যানেজার, ব্যাঞ্চ ম্যানেজার, অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল মানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও জোনাল ম্যানেজারের বাইরে কমিশন বন্টন করা যাবে না। বেশী খরচের বোঝা লাঘবে এই নীতির বাস্তবায়ন জরুরী।

ভুল তথ্য দিয়ে বীমা করা যাবে না বলে বীমাকর্মীদের সতর্ক করেন, জেনিথ ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে পলিসি করা হলে গ্রাহক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি কোম্পানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে, বীমা সম্পর্কে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা তৈরি হয়।

এ জন্য সবাইকে কাজের স্বচ্ছতা রাখতে হবে। আবারো তিনি জেনিথ নিয়ে কথা বলেন, জানান, বীমা খাতের কিছু দূর্বলতা শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেনিথ ইসলামী লাইফ।  বিশেষ করে আর্থিক খাতে শতভাগ সচ্ছতা চায় জেনিথ লাইফ।  এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদেরকে প্রিমিয়ামের টাকা অবশ্যই ব্যাংক, বিকাশ ও রকেট এর মাধ্যমে জমা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে। কারো হাতে নগদ টাকা প্রদান করা যাবে না।

প্রসঙ্গত এই নিবার্হী আরো বলেন, বীমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য রেগুলেটরকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। রেগুলেটরে লোকবল সংকট আছে। এ সংকট দূর করে রেগুলেটরের উচিত হবে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা। এছাড়া ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারলে এটা আমাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। সব মিলিয়ে বীমা খাতকে আগামীতে শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চান তিনি। তাছাড়া জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন।