১১০০ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল আবেদন অগ্রণী ব্যাংকে

অর্থবাংলা: দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ রিশিডিউল (পুনঃতফসিল) করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। এ সুবিধা নিতে অগ্রণী ব্যাংকে ছোট, মাঝারি ও বড় খেলাপিদের মধ্যে আবেদন করেছে ৯৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক মোট খেলাপির মধ্যে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ রিশিডিউল করতে পারবে। অবশ্য এই সুযোগে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা পেয়েছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। সূত্রমতে, এসব আবেদনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে থাকা শীর্ষ খেলাপির মাত্র চারটি বড় আবেদন জমা পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ রিশিডিউল (পুনঃতফসিল) করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। পাশাপাশি ছিল এক্সিট সুবিধা। প্রত্যাশা ছিল এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে, অন্যরা ঋণ রিশিডিউল করে ব্যবসা করবে। কিন্তু এই সুযোগ নিতে চাচ্ছে না বড় আকারের খেলাপিরা।

সূত্রমতে, অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির মধ্যে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে, প্রধান শাখার ইফতি ফ্যাশন ও ঢাকা ডেনিম, ব্যাংকটির বৈদিশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখার গিভেন্সী স্পিনিং মিলস এবং চট্টগ্রামের লালদিঘিপূর্ব করপোরেট শাখার আরাফাত স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের মোট পাওনা রয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করে মোট এক হাজার ১০০ কোটি টাকার খেলাপির মধ্যে মাত্র ২০০ কোটি টাকা হচ্ছে বড় গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৯০০ কোটি টাকাই হচ্ছে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের কাছে। আবেদনকারীরা শর্ত হিসেবে খেলাপির দুই শতাংশ জমা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংকে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সুবিধায় তারা ঋণগুলো রিশিডিউল করতে পারবে, যাতে তারাও বাঁচে, ব্যাংক প্রভিশন রক্ষা থেকে রেহাই পায়। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সেই সুযোগটি নিল না।

অগ্রণী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপির পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সন্দেহযুক্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি টাকা। অপরদিকে আদায় অযোগ্য বা মন্দ ঋণের পরিমাণ হচ্ছে পাঁচ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ৩৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ব্যাংকটি এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। পুনঃতফসিলের ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ থেকে এই এক হাজার ১০০ কোটি টাকা বাদ যাবে। এর বিপরীতে রাখা প্রভিশনও অবমুক্ত হবে।

২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকটি করপরবর্তী মুনাফা করেছিল প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি করপরবর্তী মুনাফা করেছিল ৬৭৬ কোটি টাকা। আগ্রাসী ব্যাংকিং ও নামধারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকটির মুনাফা কমে আসছে। অপরদিকে বিনিয়োগ সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ঋণখেলাপিদের এককালীন পরিশোধের সুযোগ ও রিশিডিউল করার সুবিধা দেয় সরকার। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে। এই সার্কুলারের কিছু শর্তের বাস্তবায়ন নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। আগামী ৩ নভেম্বর এ বিষয়ে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।