একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শনার্থী হিসেবে প্রবেশের জন্য টিকিটের নিবন্ধন করলেও নিবন্ধনকারীরা পেয়েছেন বাড়তি কিছু। টিকিটের জন্য নিবন্ধন করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের অনেকেরই তৈরি হয়ে গেছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। এর জন্য যেতে হয়নি কোনো অফিস বা এজেন্টের কাছে।
সম্প্রতি এমনটাই ঘটেছে রাইড শেয়ারিং ও টিকিটিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম এবং মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট প্ল্যাটফর্ম ডিমানি’র ক্ষেত্রে।
চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে ওই অনুষ্ঠানটির টিকিটের জন্য নিবন্ধন শুরু হয় সহজে, চলে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধন সম্পন্ন করতে আবেদনকারীদের দিতে হয় জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি ও একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস। নিবন্ধন সম্পন্ন করা অনেকেই ডিমানি থেকে যাচাইয়ের একটি মেইল পান। সেটিতে ক্লিক করলেই ফিরতি মেইলে মোবাইল ওয়ালেট আইডি সফলভাবে চালু হয়েছে এমন একটি বার্তা পান তারা। সঙ্গে পান আইডি ও পিন নম্বর।
তবে, বিনামূল্যে ও কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই এমন আইডি পেলেও চটেছেন নিবন্ধনকারীরা। ব্যবহারকারীর সুনির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়াই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া অযৌক্তিক বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নাফিস মাহমুদ রেজা নামে এক নিবন্ধনকারী ফেসবুকে তার অভিজ্ঞতা পোস্ট করলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
পোস্টে তিনি লেখেন, অনুষ্ঠানটিতে প্রবেশের নিবন্ধন ও টিকিট বিতরণের দায়িত্বে ছিল সহজ। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি দিতে হয়েছে। এটা গতবারও ছিল। কিন্তু, এবার ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে’ তারা একটি অতিরিক্ত শর্ত জুড়ে দিয়েছে যে, আমার দেওয়া তথ্য ইভেন্টের ডিজিটাল পেমেন্ট পার্টনার অর্থাৎ ডিমানির সঙ্গে বিনিময় করা হবে। কিন্তু, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সহজ শুধু আমাদের ফোন বা ই-মেইলই ডিমানিকে দেয়নি। বরং, আমাদের ওইসব দলিলও তাদের দিয়েছে। ব্যবহারকারীরা ডিমানিতে অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার মেইল আসার আগপর্যন্ত কেউ কিছু জানতে পারেনি।
এটি নিয়ে ডিমানির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছেন বলেও দাবি করেন রেজা।
মেহেদি আকাশ তিতাস নামে আরেক নিবন্ধনকারী বলেন, তথ্য অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করা হবে, এমন শর্ত মেনে নিবন্ধন করতে হবে- এটা অনৈতিক। যেকোনো সেবার বিনিময়েই আমার ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হবে এবং তা আবার অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন তথ্যের যুগ। তথ্যই এই যুগের টাকা। তাই, কেউ ফ্রি দেওয়ার নাম করে তথ্য সংগ্রহ করলে বুঝতে হবে, সে অনেক কিছু নিয়ে গেলো।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির। গ্রাহকরা নিজেদের সম্মতিতেই তথ্য দিয়েছেন ও শর্ত মোতাবেক সেই তথ্য শুধু আয়োজকদের দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন এই উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আয়োজকদের চুক্তি ছিল নিবন্ধনকারীদের তথ্য তাদের দেওয়ার। কারণ সেসব তথ্য নিরাপত্তার স্বার্থেও ব্যবহৃত হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের দেওয়া হতো। এখন তারা যদি তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিমানি’কে দেয়, তাহলে এখানে সহজের কোনো দায়ভার থাকে না। একই সঙ্গে, সহজ নিবন্ধনকারীদের এই বিষয়ে অবগত করে, তাদের থেকে সম্মতি নিয়েই তথ্য নিয়েছে।
এদিকে, ডিমানি ১২ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে তাদের ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টিকে ‘দুর্ঘটনাবশত পাঠানো ই-মেইল’ বলে দাবি করেছে। ভুলে ই-মেইলে বার্তা দেওয়া হলেও পারতপক্ষে কোনো নিবন্ধনকারীরই মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট খোলা হয়নি বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। এর জন্য, ওই বার্তায় দুঃখপ্রকাশ করা হয় ডিমানির পক্ষ থেকে।