ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সরকারের চাহিদার ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করার পর বিপদে পড়েছে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। আমদানি করা পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। আমরা এখনো অফিসিয়ালি কোনো প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাব পেলে বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ভারত যে দামে পেঁয়াজ আমদানি করেছে তার চেয়েও কম দামে বাংলাদেশকে দিতে চাচ্ছে বলে খবর শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাইস (দাম) কী সেটা ম্যাটার না। আমরা অফিসিয়ালি এ রকম কোনো প্রোপোজাল (প্রস্তাব) পাইনি। তাছাড়া এটা আমাদের কনসিডারেশনে (বিবেচনা) নেই। এ ধরনের প্রস্তাব এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়েই আসবে।’
যদি প্রস্তাব আসে তাহলে সরকার কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রোপোজাল আসলে দেখে বিবেচনা করব, কী ধরনের প্রোপোজাল। কিন্তু আমরা তো এখন নিজেরাই সরাসরি আমদানি করছি। তারপরও যদি সুইটেবল হয় দেখা যাবে। বাট, এখন আমাদের এটা কনসিডারেশনে নেই।’
এদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সরকারের চাহিদার ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করার পর বিপদে পড়েছে দেশটির সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ আমদানির পর ভারতের বেশিরভাগ রাজ্য সরকার তাদের চাহিদা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ বিপদ দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার রকিবুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ রাজ্য সরকাররা কিনতে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভারতের জ্যেষ্ঠ এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত বিদেশ থেকে মোট ৩৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি করেছে। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আমদানিকৃত পেঁয়াজের মাত্র ৩ হাজার টন নিয়েছে। অবশিষ্ট পেঁয়াজ মুম্বাইয়ের জওহরলাল নেহেরু বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়। বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হয় না। দাম কম ও সহজ পরিবহণের কারণে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর দেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম।
দফায় দফায় দাম বেড়ে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবচেয়ে বেশি দামের পণ্যের তালিকায় সবার ওপরে স্থান করে নেয় পেঁয়াজ। ৩০ থেকে ৪০ টাকার পেঁয়াজের দাম ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় পৌঁছায়। এ অবস্থায় দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে দেশজুড়ে বাজারে বাজারে অভিযান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস, বড় চালান আসার খবর- কোনো কিছুই থামাতে পারেনি পেঁয়াজের দরবৃদ্ধি।