আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত ১০ বছরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মোসাদ্দেক হোসেন ফালু, এমএ হাসেমের মতো আলোচিত নেতারা দল ছেড়েছেন। গত মঙ্গলবার এম মোরশেদ খান পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ একাধিক নেতা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলটির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দল থেকে কে পদত্যাগ করবেন, কে করবেন না তা নেতারা নিজেরাই ঠিক করবেন। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
এম মোরশেদ খানের পদত্যাগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মোরশেদ খানের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সাবেক সদস্য ওয়াহিদুন্নবী লিখেছেন, ‘বিএনপি করে মোটাতাজা হয়ে এখন বিপদে কিংবা নেত্রী জেলে থাকা অবস্থায় দল ত্যাগ এই রকম আরও আছে ঘাপটি মারা। তবে আমরা এদের নিয়ে কথা বললে অনেকে মাইন্ড করেন ঘটনা ঘটার পরে কয়, না ঠিক আছে রাজনীতি করতে চাইলে এদের নিয়ে লিখুন নিজের ত্যাগের স্পেস নিজেই বানান দালাল ডিক্টেড করুন এখনই সময়।’
বিএনপি থেকে পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোরশেদ খান বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি এখন আর রাজনীতি নেই। এরা স্কাইপের মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়। এটি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। শুধু বিএনপি নয়, আমি আর কোনো রাজনীতি দলের সঙ্গেই থাকব না। সব ধরনের রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চট্টগ্রাম বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না দেওয়া, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তার নেতাকর্মীদের কমিটিতে কোণঠাসা করে রাখাসহ নানা কারণে মোরশেদ খান পদত্যাগ করে থাকতে পারেন।’ দল পরিচালনা পদ্ধতি ও নেতৃত্বের সমালোচনা করে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সেই ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।’
মোরশেদ খানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আতাউল নয়া পল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র নিয়ে যান। এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্কাইপিতে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। ওই বৈঠক শেষ হলে রাত ১০টার দিকে মোরশেদ খানের পদত্যাগপত্রটি রিজভীর হাতে তুলে দেন আতাউল।
পদত্যাগের গুঞ্জন বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। এটাও তেমন গুঞ্জন। বিএনপি থেকে আমার পদত্যাগের বিষয়টি গুঞ্জনই থেকে যাবে। অন্য ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের তো পদই নাই। পদত্যাগ করব কোথা থেকে।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদের বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘৩৫ জন সহসভাপতি। এর মধ্যে আমি মাত্র একজন। এটা থাকা আর না থাকা একই কথা।’ আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার কাছ থেকে শুনলেন বিএনপি থেকে আমার পদত্যাগের খবর? যার কাছ থেকে শুনেছেন তার কাছেই জানতে চান। আমি পদত্যাগ করলে পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে প্রচার হতো।’
২৯ অক্টোবর ২০১৫-তে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘সম্পূর্ণ শারীরিক কারণে আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি। আমি বাইরে যেতে পারি না, আমার চলাফেরার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ অবস্থায় রাজনীতি করতে হলে যে ধরনের শ্রম, সময় দেওয়া প্রয়োজন, সেটা আমার পক্ষে শারীরিক কারণে সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে পদত্যাগের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিএনপি এখন অনেকটাই দূরে।’
৬ আগস্ট ২০১৬-তে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। কমিটি ঘোষণার সাড়ে চার ঘণ্টার ব্যবধানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা পদত্যাগপত্রটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। পদত্যাগপত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফালু লেখেন, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এছাড়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাসেম।
দেশ রূপান্তর