জিনান মাহমুদ:
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন নারী উদ্যোক্তারা। নারীরা দেশ গড়ায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই। নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে চলছেন প্রতিনিয়ত। গ্রহণ করছেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। জয় করছেন কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি অধ্যায়। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরের সাথে জড়িয়ে আছেন এমন একজন সফল নারী- তিনি হচ্ছেন, ঝুমা দেব টুকি। যিনি এশিয়া এয়ারকনের পরিচালক হিসেবে সফলতার মধ্যদিয়ে পরিবহন সেক্টরকে আলোকিত করেছেন। জাতীয় অর্থনীতি বিষয়ক নিউজ পোর্টাল অর্থবাংলাডটকমকে একান্ত সাক্ষাতকারে তুলে ধরেছেন পরিবহন সেক্টরের প্রতিকূলতা এবং অনেক অসাধারণ সম্ভাবণার গল্প।
অর্থবাংলা : আপনি কীভাবে পরবিহন ব্যবসায় এলেন? ব্যবসায় কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, আপনার অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।
: আপনাকে ধন্যবাদ। আমি কুমিল্লার সন্তান। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা র্স্বগীয়/প্রয়াত সাধন চন্দ্র দেব।
কুমিল্লা শহরের একজন সু-পরিচিত পরিবহন ব্যবসায়ী ছিলেন। বাবা র্দীঘসময় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ঢাকা টু কুমিল্লা সড়কে চলমান এশিয়া এয়ারকন বাসের মালিক ছিলেন। আমার বাবার উৎসাহ ও সহযোগিতায় পরিবহন ব্যবসায় আমার আগমন। দীর্ঘ আট বছর ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছি। বাবা মৃত্যুবরণ করায় ব্যবসায় আমাকে পুরো দায়িত্ব পালন করতে হয়। বর্তমানে আমাদের দশটি বাস ঢাকা-কুমিল্লা সড়কে চলাচল করছে।
অর্থবাংলা : আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবসা কতটা নারী বান্ধব?
: নি:সন্দেহে পরিবহন ব্যবসা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। বাংলাদেশে গণপরবিহন শতভাগ নারী বান্ধব, এটা আমি মনে করি না। সারাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে বিভিন্ন জায়গায় গণপরবিহনে নারী নির্যাতনের ঘটনা শুনতে পাই। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের অবস্থা বিবেচনা করলে এর সংখ্যা কম। তবে আমরা যারা গণপরবিহনে চলাচলা করি এবং ড্রাইভার ও হেল্পারসহ সবাই একটু সচতেন হলে এই নারী নির্যাতন অনেকটা কমে আসবে। আমি সবাইকে আহ্বান করবো আসুন সকলে এই ব্যাপারে সচতেন হই।
অর্থবাংলা : সরকার কাছে কি কি ধরনের সহযোগীতা প্রত্যাশা করছেন ?
: সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, দেশে যে সমস্ত নারীরা এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং ব্যবসায় আসতে চায় তাদেরকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সামাজিক নিরাপত্তা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে এবং এধরনের পেশায় ধরে রাখতে হবে। পরিবহনে নারীরা যতবেশি যুক্ত হবেন, গণপরিবহণগুলো ততবেশি নারী বান্ধব হয়ে উঠবে-এটা আমার বিশ্বাস।
অর্থবাংলা : নতুন নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কি?
: একজন নারী উদ্যোক্তা হিসাবে পরিবহন সেক্টরে আমি সবসময় নারীদেরকে উৎসাহিত করি। আমি মনে করি, সব পেশাতেই নারীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মতো মন-মানসিকা থাকতে হবে, না থাকলেও তৈরী করতে হবে। কারণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সকল ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিও করছেন। সে ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবসাতে নারীদের পিছিয়ে থাকা চলবে না। সাহস করে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে অনেক সমস্যা এমনিতেই দূর হবে।
অর্থবাংলা : যানজট নিরসনে আপনার কি মতামত/পরামর্শ?
: যানজট বাংলাদেশের জনপদে একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। যেমনঃ পরিবহন চালক ও পথচারী উভয়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে, রাস্তাগুলো তুলনামুলক যতটুকু সম্ভব প্রশস্ত করতে হবে, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ফুটওভার সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং পথচারীদের ফুটওভার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ীর সংখ্যা কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে হবে, ফুটপাট দখলমুক্ত করে পথচারীদের ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এ ধরনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রনে আসবে।