‘দেশে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে ৪ কোটি শিশু’

করোনা মহামারিতে ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এ সময় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর স্কুলশিক্ষা ব্যাহত হয়েছে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনেস্কো ও ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

‘সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস অন দ্য এফেক্টস অ্যান্ড রেসপন্স টু কোভিড-১৯ অন দ্য এডুকেশন সেক্টর ইন এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ওই দুই সংস্থা। সেখানে বলা হয়েছে, মহামারিতে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ৮০ কোটি শিশুর স্কুলশিক্ষা ব্যাহত হয়েছে।

পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া-সহ এ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের হার। মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মানসিক চাপ এবং বিষন্নতায়ও ভুগছে অনেক শিশু।

বাংলাদেশ সম্পর্কে যে চিত্র ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। মহামারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সচল রাখতে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছিল।

কিন্তু দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি ৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ জনের এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকার মতো আনুষাঙ্গিক সুবিধা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়েছেন বিপুলসংখ্যক অভিভাবক। তাদের প্রায় সবাই দরিদ্র ও শ্রমজীবী। ফলে সংসারের হাল ধরতে অনেক ছেলেশিশুকে বইখাতা ফেলে কাজের সন্ধানে নামতে হয়েছে। অন্যদিকে, মেয়েশিশুদের একটি বড় অংশ হয়েছে বাল্যবিয়ের শিকার, অনেককে আবার গৃহস্থলির কাজে সহযোগিতা করতে হচ্ছে অভিভাবকদের।ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ’১৮ মাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। এটি ইতিবাচক। এখন বাংলাদেশ সরকার, দেশের জনগণ— আমাদের সবার উচিত হবে আর কোনও শিশু

যেন স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে; সেই ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি, যেসব শিশু ঝরে পড়েছে; তাদের ফের কোনোভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি-না সেটিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’

‘দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ওপর মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষার সুবিধা যেন আরও বেশি সংখ্যক শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বাংলাদেশের সরকারের।’