দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রতিবন্ধি !

 

দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ কোনো না কোনো প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছে। অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থাৎ শ্রমবাজারে আসতে পারছে না তারা। এর আর্থিক ক্ষতিও কম নয়। ইউএনএসকাপের হিসাবে, এর পরিমাণ বছরে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের (বিবিডিএন) তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ নানাভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। বাংলাদেশে এ সমস্যায় ভুগছে মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীরা শ্রমবাজারে যুক্ত হতে না পারায় এর আর্থিক ক্ষতি নিয়ে গবেষণা করেছেন একাধিক গবেষক। তাদের সে গবেষণার ফলাফল ইউএনএসকাপের সম্প্রতি প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী মানুষগুলো শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারার কারণে বছরে প্রায় ৯০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি ২৩ কোটি ডলারের পরোক্ষ ক্ষতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১১৩ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে বিপুলসংখ্যক প্রতিবন্ধী মানুষ থাকলেও অর্থনীতির মূল স্রোতে নেই তারা। প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়টি এখনো চ্যারিটিনির্ভর। নানা জটিলতার কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধী কর্মী নিয়োগে আগ্রহী হয় না। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধী প্রার্থী মাত্রই ধরে নেয় তার অবদান অন্যদের তুলনায় কম হবে। তাকে নিয়ে কাজ করতে গেলে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে প্রতিষ্ঠান।

বিবিডিএন ট্রাস্টি ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি কামরান টি রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের বিশালসংখ্যক মানুষ প্রতিবন্ধিতা নিয়েই বসবাস করছে। কিন্তু তাদের সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। এর অর্থই হলো ঘরে বসেই জীবন পার করছে তারা। তাদের পরিবার যেমন ঘর থেকে তাদের বের করতে পারছে না, তেমনি রাষ্ট্রীয় নীতিও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহায়ক নয়। কিন্তু সবাই একই ধরনের প্রতিবন্ধিতায় নেই। এজন্য বিবিডিএন প্রতিবন্ধী মানুষদের অর্থনীতির মূল কাতারে আনতে চাকরি মেলা, কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

তবে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদপ্তর। ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ এবং পুনর্বাসন কাউন্সিল আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। আবার বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে ৫ শতাংশ ট্যাক্স রিবেটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের আইন ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কার্যক্রমের কর্মসূচি পরিচালক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. আশরাফী আহমদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের আর্থিক কর্মকাণ্ডে নিয়ে আসা কিংবা সুযোগ-সুবিধা দিতে গেলে তাদের আগে চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য দেশের প্রায় ৫৭০টি স্থানের প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্থানে এখন পর্যন্ত ১৭ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী মানুষকে শনাক্ত করে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে। সরকারের যেকোনো সুযোগ-সুবিধা কিংবা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কার্ডটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।