ছাত্রীকে ব্যক্তিগত রুমে ডাকতেন কুবি শিক্ষক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে একই বিভাগের (সান্ধ্য কোর্স) বিবাহিত এক ছাত্রীকে মোবাইলে যৌন হয়রানিমূলক ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রীর পরীক্ষা চলাকালে সুকৌশলে তার মোবাইল নিয়ে ওই শিক্ষক মেমোরি কার্ড পরিবর্তনসহ মোবাইলের ইমো, মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপ থেকে সকল অনৈতিক প্রস্তাবের বার্তা মুছে ফেলেছেন।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করে গত বুধবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান বরাবর ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।

অভিযোগকারী ওই ছাত্রী বলেন, ইংরেজি বিভাগে ভর্তির পর বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার প্রথমে আমাকে শ্রেণি প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেন। বিভিন্ন সময় তিনি আমাকে তার রুমে ডাকতেন। এছাড়াও আমাকে তার ব্যক্তিগত রুমে ও শহরের বাসায় ডাকতেন। কিন্তু আমি এগুলো বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যেতাম। পরবর্তীতে আমাকে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপ থেকে ক্ষুদে বার্তা দিতেন এবং ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কিছু বলতেন। এসব অনেক তথ্য আমার মোবাইলে সংরক্ষিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি প্রথম সেমিস্টারের একটি কোর্সের পরীক্ষা দিতে বিভাগে যাওয়ার পর সবার মোবাইল ফোন জমা রাখতে বলা হয়। এ কথা শুনে আমি মোবাইলসহ ভ্যানিটি ব্যাগ সামনে রাখি। পরে পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে দেখি মোবাইলের সিম অদল-বদল করা এবং মেমোরি কার্ডের জায়গায় নষ্ট একটি মেমোরি কার্ড লাগানো। এছাড়া মোবাইলটির সম্পূর্ণ তথ্য মুছে দেয়া। বিষয়টি জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষককে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। তখন বুঝতে পারি ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তিনি মোবাইল থেকে সুকৌশলে সব তথ্য মুছে ফেলেছেন।

ওই ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর আগেও অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি এবং শিক্ষক ডরমেটরিতে তার নিজস্ব কক্ষে পছন্দের শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই তার ছাত্রীদের পছন্দমতো নম্বর লিখে দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগেও তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তিনি এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত বিচার দাবি করেন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজি বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আগেও বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাত কাটানোর অভিযোগ রয়েছে।

বিভাগের নিয়মিত ও সান্ধ্য কোর্সের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আসলেই তাদের মধ্য থেকে সুন্দরী ছাত্রীকে শ্রেণি প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন তিনি এবং তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ছাত্রীদের থেকে অনৈতিক সুবিধা পেতে তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন। নিজেদের সম্মান ও রেজাল্টের কথা চিন্তা করে তারা অভিযোগ করতে ভয় পায়। আর সান্ধ্য কোর্সের ছাত্রীদের মধ্য থেকে সুন্দরী ও বিবাহিতরা হচ্ছে তার টার্গেট।

এ বিষয়ে শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু দেয়া হয়েছে তা প্রমাণ করার বিষয়। প্রমাণ করলে বিষয়টি বুঝা যাবে।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। সান্ধ্য কোর্সের সঙ্গে যারা আছেন সবাইকে নিয়ে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্যের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। শিগগিরই তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।