চিনির বৈশ্বিক সরবরাহে আশা জাগাচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপ

বিশ্ববাজারে বর্তমান চিনির সংকট তীব্র। বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক দেশ ব্রাজিলে খরার প্রভাবে চিনি শিল্প প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছে। সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে চিনি আমদানিনির্ভর দেশগুলোর। টালমাটাল এ পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার আশা জাগাচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপ। দেশ দুটিতে চিনির ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন সরবরাহ ঘাটতিতে ভারসাম্য নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। পণ্যবাজারের নেতৃস্থানীয় তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টোনএক্স এ তথ্য জানিয়েছে।

চলতি মাসে চিনির ২০২১-২২ বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ মৌসুমেও ব্রাজিলের উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। খরার তীব্রতা কাটিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে দেশটির। অন্যদিকে নতুন মৌসুমে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে চিনি উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি এলেও এ মৌসুমে উৎপাদন মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে চাহিদা। এ নিয়ে তিন বছরের মতো চিনির চাহিদায় এমন উল্লম্ফন দেখবে বিশ্ব।

স্টোনএক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্ববাজারে চিনির ঘাটতি ছিল ২৯ লাখ টন। এমন ঘাটতির পেছনে দায়ী করা হচ্ছে ব্রাজিলে বিপর্যস্ত উৎপাদন, লকডাউন, পরিবহন ও জাহাজীকরণ ব্যয় বৃদ্ধিকে। তবে নতুন মৌসুমে এ সংকীর্ণ দশা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে বৈশ্বিক চিনি শিল্প। এ সময় ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮ লাখ টনে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘাটতি কমলেও তা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। ফলে এ বছরও চিনির বৈশ্বিক মজুদে নিম্নমুখিতা অব্যাহত থাকবে।

স্ট্যাটিস্টার দেয়া তথ্যমতে, বৈশ্বিক চিনি উৎপাদনে ষষ্ঠ থাইল্যান্ড। নতুন মৌসুমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ভোগ্যপণ্যটির উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৫ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে বলে জানায় স্টোনএক্স। এদিকে গত মৌসুমের মতো নতুন মৌসুমেও ভারতে আখ উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফলে গত মৌসুমের তুলনায় চিনি উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ১৫ লাখ টনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এশিয়ায় সব মিলিয়ে অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি এসব দেশের উৎপাদন বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রাখবে।

তবে স্টোনএক্স বলছে, ভারতের চিনি উৎপাদন আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল। দেশটি আখ ও বিট থেকে ইথানল তৈরি না করলে আরো ৩০ লাখ টন চিনি উৎপাদন সম্ভব হতো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে ইথানল উৎপাদনে আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। চিনিকলগুলো চিনির পরিবর্তে প্রতি টন ইথানল তৈরি বাবদ ২ ডলার করে পাচ্ছে। ফলে একটি বড় সংখ্যক চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে ইথানল উৎপাদনে।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে ২০২১-২২ মৌসুমে চিনি উৎপাদন প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে স্টোনএক্স। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে মৌসুম শেষে এ অঞ্চলে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি ৭২ লাখ টনে।

অঞ্চলটিতে চিনির কাঁচামাল বিট উৎপাদন উপযোগী আর্দ্র আবহাওয়া এমন প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। স্টোনএক্স বলছে, সদ্য শুরু হওয়া মৌসুমে ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৪২ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে।