পর্যটনে নতুন মাত্রা
কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন পর্যটকরা

 

নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা সেন্টমার্টিন। ছোট এই দ্বীপটি ভ্রমণে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হতো পর্যটকদের। তবে টেকনাফ নয়, এখন কক্সবাজার থেকেই বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সরাসরি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন পর্যটকরা।
প্রতিদিন যাওয়া আসায় জাহাজে পাড়ি দিচ্ছেন ১৯০ কিলোমিটার নৌপথ। রোমাঞ্চকর সমুদ্র ভ্রমণে মেতে উঠেছেন পর্যটকরা। যা কক্সবাজারের পর্যটনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

রোববার সকালে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল না হতেই মানুষের দীর্ঘলাইন। সবাই ছুটছেন কে কার আগে জাহাজে উঠবেন। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজে সবাই যেন রোমাঞ্চকর যাত্রার জন্য উন্মুখ ।

পর্যটন মৌসুম শুরু না হতেই এবার কক্সবাজার থেকেই বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সরাসরি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা। আগে সড়কপথে যাত্রীদের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজে উঠতে হতো। কক্সবাজার থেকেই সরাসরি এই জাহাজ চালু হওয়ায় সড়ক পথে ভ্রমণের ঝক্কি ও সময় দুটোই কমলো। তাই দারুণ খুশি পর্যটকরা।

রিয়াজ নামে এক পর্যটক বলেন, আগে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সড়ক পথে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যেতো। এখন কক্সবাজার থেকে জাহাজ চলাচল শুরু করায় আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।

রোকসানা রিয়া বলেন, সেন্টমার্টিনে ছেড়া দ্বীপ আছে, অনেক সুন্দর স্থান আছে যেখানে বেড়ানো যায়। আবার সেন্টমার্টিন সৈকতের পানি অনেক স্বচ্ছ ও পরিস্কার। এই পানিতে গা ভেজালে অনেক ভালো লাগে। তাই প্রতি বছর সেন্টমার্টিন যাই। তবে এবারে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ভিন্ন। কারণ এখন কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারছি, এই জন্য কষ্টটা অনেক কমে গেছে।

অর্ণব চৌধুরী নামে এক পর্যটক বলেন, সাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌঁছানো-সত্যিই আনন্দদায়ক। যেখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, পাহাড়, বিশাল সাগর, মাছ, সীমান্ত সবকিছু দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানান, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়া (এয়ারপোর্ট রোড) বিআইডব্লিওটিএ ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আবার বিকেল ৩টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে আসবে। উভয় দিক থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

কক্সবাজারের কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের ইনচার্জ ফজলে আলী মোহাম্মদ খুরশীদ বলেন, পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন সরাসরি জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা একটা খুবই রোমাঞ্চকর ভ্রমণযাত্রা। কারণ, জাহাজটি সাগরের মাঝখান দিয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা সাগরে যাত্রার এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

তিনি বলেন, পর্যটকদের আরো দ্রুত সেন্টমার্টিন পৌঁছে দেয়ার জন্য চলতি মাসে নতুন একটি বিলাসবহুল ক্রুজ সংযুক্ত হচ্ছে। যা কক্সবাজারের পর্যটন খাতে আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।

কক্সবাজারের ডিসি মো. কামাল হোসেন বলেন, অনুমতি সাপেক্ষে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে একটি মাত্র পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করছে। পরবর্তীতে অনুমতি সাপেক্ষে টেকনাফ থেকেও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

ভাড়া কত?

এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজ এর ইকোনমি আসনের (দ্বিতীয় শ্রেণি চেয়ার) ভাড়া জনপ্রতি দুই হাজার টাকা। এছাড়া বিজনেস শ্রেণি আসন (প্রথম শ্রেণি চেয়ার) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। মোট ১৭টি লাক্সারি ক্লাস কেবিন রয়েছে এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজে। এদের মধ্যে ইকোনমি শ্রেণি কেবিনের (দ্বিতীয় শ্রেণি) ভাড়া ১২ হাজার টাকা ও লাক্সারি ক্লাস (ভিআইপি) কেবিনের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। প্রতিটি কেবিন দুজনের জন্য প্রযোজ্য। অতিরিক্ত জন প্রতি আলাদা সাধারণ টিকেট কেটে নিতে হবে। প্রতিটি টিকেটের সঙ্গে সৌজন্যমূলক নাস্তা অন্তর্ভুক্ত আছে। আর ভাড়া হচ্ছে আপ-ডাউন বা আসা-যাওয়াসহ। কোনো যাত্রী ভিন্ন তারিখে ফিরতে চাইলে তা টিকেট সংগ্রহ করার সময় উল্লেখ করতে হবে।

প্রায় ৫৫ মিটার দীর্ঘ ও ১১ মিটার প্রশস্ত জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারে। ১৭টি ভিআইপি কেবিন সমৃদ্ধ এই নৌযানে ভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ৫১০টি আসন ব্যবস্থা আছে। আরো আছে কনফারেন্স হলরুম, ডাইনিং স্পেস, সি ভিউ ব্যালকনি।

দীর্ঘদিন এ উপকূলীয় পথে অভিজ্ঞ মাস্টার ও ক্রু দিয়ে জাহাজটি পরিচালনা করা হবে বলে জানালেন জাহাজ কর্তৃপক্ষ।