ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যেভাবে ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে, ঠিক সেই মডেল অনুসরণ করে জম্মু-কাশ্মীরে হিন্দুদের জন্য স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ভারতীয় দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে দেশটির কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী এমন মন্তব্য করেছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের সঙ্গে এমন তুলনা করে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছেন ভারতীয় এই কূটনীতিক।
নিউইয়র্কে ভারতীয় দূতাবাসের একটি অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হওয়া পণ্ডিতরা দেশে ফিরতে পারবেন কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, বিতাড়িত কাশ্মীরি পণ্ডিতরা খুব শিগগিরই উপত্যকায় ফিরতে পারবেন। নব্বইয়ের দশকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের হামলার শিকার হওয়ার পর শত শত কাশ্মীরি পণ্ডিত উপত্যকা ছাড়তে বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরি সংস্কৃতি হলো হিন্দু সংস্কৃতি। ইতোমধ্যে বিশ্বে এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ আমাদের আছে… ইসরায়েলিরা যদি এটি করতে পারেন…।’
সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘কেউ (শ্রোতাদের মধ্যে) ইহুদি ইস্যু…ইসরায়েলের ইস্যু সম্পর্কে কথা বলেছেন…তারা তাদের সংস্কৃতিকে দেশের বাইরে ২ হাজার বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি মনে করি আমাদেরও কাশ্মীরি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কাশ্মীরি সংস্কৃতি হলো ভারতীয় সংস্কৃতি… এটি হিন্দু সংস্কৃতি। আমরা কেউ কাশ্মীর ছাড়া ভারতের কল্পনা করতে পারি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কাশ্মীর ইস্যুতে তার এমন মন্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর সেটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। টুইটারে নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে চক্রবর্তী বলেছেন, তার মন্তব্যকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবদ্দশায় আমাদের জমি ফিরে পাবো। আমাদের মানুষজন সেখানে ফিরে যাবেন। আমাদের কাশ্মীরি ভাইরা শরণার্থী শিবিরে বাস করছেন…তারা অবশ্যই নিজের জায়গায় ফিরে যেতে পারবেন।
‘ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি মডেল আমাদের কাছে আছে; মধ্যপ্রাচ্যে আছে…যদি ইসরায়েলিরা এটি করতে পারেন…।’ গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তান যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে কাশ্মীর সমস্যা উত্থাপন করার চেষ্টা করেছিল, সেটি নিয়েও নিজের ভাষণে কিছু মন্তব্য করতে শোনা যায় ওই ভারতীয় কূটনীতিককে। কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তীর ওই মন্তব্যের ভিডিওটির প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একটি টুইট করেছেন।
ভারতীয় এই কূটনীতিক বলেন, কিছু মানুষ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের ওপর নাখোশ হয়েছেন…মানবাধিকার পরিষদ, মার্কিন কংগ্রেসে এ বিষয়টি নিয়ে গেছেন…তারা সিরিয়া কিংবা ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে গিয়ে ছবি তোলেন না কেন? কেন তারা এখানে আসছেন? আমরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করছি; কিন্তু তারা এতে খুশি নন।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার কথা উল্লেখ করে ভারতীয় এই কূটনীতিক বলেন, জীবনের ভয়ে আমরা সেখানে যাব না? এই ভয় থাকবে না। আমাদের কিছু সময় দিন।
গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের আগে এই উপত্যকায় ব্যাপক বিধি-নিষেধ ও কারফিউ জারি করে দেশটির ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বাতিলের পাশাপাশি ব্যাপক ধরপাকড় এখনও অব্যাহত আছে; অচলাবস্থা চলছে কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের উদ্যোগকে স্বাগত জানান ৯০ দশকে দেশত্যাগী কাশ্মীরের পণ্ডিতরা।
সূত্র: এনডিটিভি।