‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল’

‘গাঁদা ফুলের এক গাদা কথা’

‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/এনে দে নইলে/ বাঁধব না বাঁধব না চুল’ গাঁদা ফুল নিয়ে এই ছড়াগানটি শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। শীতের অন্যরকম আকর্ষণ এই গাঁদা ফুল। সাধারণত এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়। বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন ও গৃহসজ্জায় গাঁদার ব্যাপক ব্যবহার ফুলটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

গাঁদা বা গন্ধা (গন্ধা>গেন্ধা>গেনদা>গাঁদা) একটি সুগন্ধি ফুল যা সর্বত্র সহজে হয়ে থাকে এবং গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। এটি Compositae পরিবারের একটি সদস্য, বৈজ্ঞানিক নাম Tagetes erecta। গাঁদা ফুল বিভিন্ন জাত ও রঙের দেখা যায়। এই ফুল সাধারণত উজ্জ্বল হলুদ ও কমলা হলুদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গৃহস্থ বাগানের সাধারণ ফুল গাঁদা।

গাঁদা গুল্মজাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর প্রায় ৫৬টি প্রজাতি আছে। এই গাছের আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। বিশেষ করে মেক্সিকোতে এই গাছ অধিক জন্মে। এর কিছু প্রজাতি পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলের সর্বত্রই জন্মে। বাংলাদেশে এর ৩-৪টি প্রজাতি পাওয়া যায়।

১. আফ্রিকার গাঁদা। দেশীয় নাম রাজগাঁদা। বৈজ্ঞানিক নাম- Tagetes erecta।

২. ফরাসি গাঁদা। দেশীয় নাম কালীগাঁদা। বৈজ্ঞানিক নাম- Tagetes patula।

৩. ছোট গাঁদা। বৈজ্ঞানিক নাম-Tagetes lucida।

৪. তারা গাঁদা। বৈজ্ঞানিক নাম-Tagetes patula।

৫. মিনুটা গাঁদা। বৈজ্ঞানিক নাম- Tagetes minuta।

এ ছাড়া বর্তমানে চীন, জাপান প্রভৃতি দেশ থেকে পুষ্প প্রেমিকরা আমদানি করেছে।

রাজগাঁদা : এই গাছগুলোর আদি নিবাস মেক্সিকো। এই কারণে একে ইংরেজিতে Mexican marigold ev Aytec marigold বলা হয়। আর গাছগুলো ৫০-১০০ সেন্টিমিটার (২০-৩৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছগুলো খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে ডালপালা বিস্তার করে ঝোপের সৃষ্টি করে। এর কাণ্ড বেশ নরম হয়। কাণ্ডে সূক্ষ্ম লোম থাকে। কাণ্ডের উভয় দিকে পাতা জন্মে এবং পক্ষাকারে বিস্তৃত হয়। এই গাঁদা ফুলের জন্য আদৃত। এই গাছের ফুল হলুদ-কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। ফুলগুলো বেশ বড় গোলাকার হয়ে থাকে। ফুলগুলো ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই গাছের বাগান করা হয়। এ ছাড়া উঠানে, টবে এই গাছ লাগানো হয়। এই গাঁদা পাতা ছেঁচে রসসহ কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এর রস কানের ব্যথার উপশম করে। ফোড়া, কার্বাঙ্কল ও পাঁচড়ায় বিশেষ উপকারে আসে।

কালীগাঁদা : এই গাছের আদি বাস ছিল উত্তর আমেরিকা। সেখান থেকে এর চাষ দক্ষিণ ইউরোপে শুরু হয়। ফ্রান্সে এক সময় এ গাছের ব্যাপক চাষ হয়। কালক্রমে ইউরোপে এ গাছের নাম দাঁড়িয়েছিল French marigold। এ গাছ রাজগাঁদার চেয়ে উচ্চতায় বেশ ছোট হয়। এর ফুল ২-৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। এর পাপড়ি বাইরের দিকের রং ঘন লাল, ভেতরের দিকটা হলুদ হয়ে থাকে। ফ্রান্সে এই গাছের তেল সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই গাঁদা পাতা ছেঁচে রসসহ কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এর রস কানের ব্যথার উপশম করে। ফোড়া, কার্বাঙ্কল ও পাঁচড়ায় বিশেষ উপকারে আসে। এই গাঁদার রস থেকে ‘আতরগন্ধা’ নামক সুগন্ধি তৈরি হয়ে থাকে।

ছোট গাঁদা : এই গাছের আদি বাস ছিল উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোতে। ইংরেজিতে এর অনেক নাম পাওয়া যায়। যেমন- Mexican marigold, pericÏn, Mexican mint marigold, Mexican tarragon, Spanish tarragon, Texas tarragon। এই গাছ উচ্চতায় ৪৬-৭৬ সেন্টিমিটার (১৮-৩০ ইঞ্চি) হয়। গাছগুলো বেশ ঝোপের সৃষ্টি করে। পাতাগুলো লম্বায় প্রায় ৩ ইঞ্চি মতো হয়। এর ফুলগুলোর হলুদ হয়, কিন্তু রাজ গাঁদার মতো ঘন পাঁপড়ি থাকে না। এই গাঁদার পাতা ছেঁচে রসসহ কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এর রস কানের ব্যথার উপশম করে। ফোড়া, কার্বাঙ্কল ও পাঁচড়ায় বিশেষ উপকারে আসে।

তারাগাঁদা : এই গাছের আদি বাস ছিল উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোতে। এই গাছের ফুলগুলো তারার মতো ছড়ানো থাকে, এই কারণে স্থানীয়ভাবে অনেক সময় তারা গাঁদা বলা হয়। ফুল হিসেবে তারা গাঁদার আদর, রাজগাঁদা বা কালীগাঁদার চেয়ে কম। সে কারণে এই গাঁদার চাষ ততটা হয় না। এই গাছ বাংলাদেশে ততটা আদৃত না হলেও, কেউ কেউ বাগানে চাষ করে থাকেন। এই গাঁদা পাতা ছেঁচে রসসহ কাটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এর রস কানের ব্যথার উপশম করে। ফোড়া, কার্বাঙ্কল ও পাঁচড়ায় বিশেষ উপকারে আসে।

মিনুটা গাঁদা : এই গাছের আদি বাস ছিল উত্তর আমেরিকা। স্প্যানিশদের মাধ্যমে স্প্যানিশ উপনিবেশগুলোতে এই গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। ইংরেজিতে এর একাধিক নাম আছে। যেমন- Southern Cone Marigold, Stinking Roger, black min।

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পেরু, বলিভিয়া এবং চিলিতে এর ব্যবহার রয়েছে। এই গাছগুলো উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১.৩ মিটার পর্যন্ত হয়। এই গাছের পাতায় সুগন্ধ আছে। এই কারণে সুগন্ধি চা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এই গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। মূলত সর্দির জন্য এই গাছের রস বিশেষ উপকারী। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি ততটা দেখা যায় না।

গাঁদা ফুলের ও পাতার ঔষধি গুণাগুণ : ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পেরু, বলিভিয়া এবং চিলিতে এর ব্যবহার রয়েছে। এই গাছগুলো উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১.৩ মিটার পর্যন্ত হয়। এই গাছের পাতায় সুগন্ধ আছে। এই কারণে সুগন্ধি চা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এ গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। মূলত সর্দির জন্য এ গাছের রস বিশেষ উপকারী। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি ততটা দেখা যায় না। গাঁদা ফুলের আছে আরও নানা রকম ঔষধি ক্ষমতা। ক্ষত ও আঘাতে এর পাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী। পাতার রস কান পাকা রোগ ছাড়াও ছত্রাকনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী। গাঁদা ফুলের নির্যাস টিউমারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। গাঁদা ফুলের নির্যাস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। জমিতে গাঁদা গাছের শুকনা গুড়া বা অপ্রয়োজনীয় অংশ প্রয়োগ করে নেমাটোডের মতো মারাত্মক রোগের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের তেল ও সুগন্ধি তৈরিতে গাঁদা ফুল ব্যবহৃত হয়।