টিআইবি বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনায়। যার বেশিরভাগই নিম্নমানের এবং অব্যবহৃত। এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের অন্তত ২৭টি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটা সংক্রান্ত তথ্যে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চপর্যায়ের গাফিলতি না থাকলে এতো বড় অঙ্কের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়।
বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই কেনা হয়েছে চাহিদাপত্র ছাড়াই। ‘এ’ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতির মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতি। কখনো কখনো দেশে থেকেই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে কোনো নামকরা বিদেশি কোম্পানির।
ফরিদপুর মেডিকেলে যন্ত্রপাতির মূল মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। ১৭৫ কেটি টাকার নিম্ন মানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্যও।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেলে আড়াইশ’ কোটি টাকা। রংপুর মেডিকেল কলেজে ভারী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ৪ কোটি টাকার সার্জিক্যাল ভারী যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এছাড়া হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আরও ২০ কোটি টাকা গরমিলের অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চাহিদাপত্র ছাড়াই ভুয়া বিল দাখিল করে পিএসিএস সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির নামে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে ১১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার, ফরিদপুর মেডিকেলে কলেজে অন্তত ৩০ কোটি টাকা, নোয়াখালী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ১৫ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যার হাসপাতালের ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা, ঢাকা মেডিকেলে কলেজে ২১ কোটি ৭০ লাখ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা, মৌলভীবাজার আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে ১৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা অব্যবহৃতই রয়েছে। কক্সবাজার মেডিকেলে ভুয়া যন্ত্রপাতির লেবেল লাগিয়ে সাড়ে ৪৮ কোটি টাকার মধ্যে ৩৭ কোটি ৪৮ কোটি টাকাই আত্মসাৎ করা হয়।
টিআইবি বলছে, খাতটির প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যখাতে টেকসই সেবার মানোন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই লুটপাট প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠানের আভন্তরীণ যে সব ঘাটতি আছে সেগুলো অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা দরকার।
স্বাস্থ্যখাতের এমন চিত্র দুদকের নজরে আনলে দুদক কমিশনার বলেন, সরকারি অর্থ লুটে যারা জড়িত তাদের পদবি দেখা হবে না।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, এক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা না, যিনি ক্রয়কারী তার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কেনা হয়েছে। দুর্নীতির সব ক্ষেত্রে আমরা সর্বদা সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করি। আমরা যদি সুযোগ পাই তাহেলে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।