ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনায় পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে এই বোর্ড গঠন করা হয়। আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর বোর্ড সভা করে আগামী ২৩ নভেম্বর আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ইভ্যালি পরিচালনায় বোর্ড : বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইভ্যালি পরিচালনায় বোর্ড গঠন করে আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক থাকবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নাম পাঠানো তিনজনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ) থাকবেন। বোর্ডে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে ফখরুদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী হিসেবে খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ থাকবেন। আর সরকারি বেতনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে থাকবেন অতিরিক্ত সচিব (ওএসডি) মাহবুব কবীর।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ও ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও পর্যবেক্ষণের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সুপারিশ পাঠাবে এসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন কমিটির প্রধান ওই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সাম্প্রতিক সময়ে ইভ্যালিসহ এ খাতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যমান আইনে এই খাত সুরক্ষা দেওয়া যাবে কি না কিংবা নতুন আইন করতে হবে কি না, এমনকি নতুন কর্তৃপক্ষ করা নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে ১৫ সদস্যের এই কমিটি গঠিত হয়।
মাহবুব কবীরকে বোর্ডে রাখা প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে আদালতের ভালো লেগেছে।
মাহবুব কবীর সর্বশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। গত বছরের ৬ আগস্ট তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ২২ সেপ্টেম্বর কম্পানি আদালতে আবেদন করেছিলাম। সেখানে একটি আবেদন ছিল ইভ্যালি অবসায়নে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়ার। আজ (সোমবার) ওই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত একটি পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। এ বোর্ড এখন ইভ্যালি পরিচালনা করবে।’
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমি আদালতের আদেশটি এখনো হাতে পাইনি। গণমাধ্যমে জেনেছি, আমাকে ইভ্যালি ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। বোর্ডের অন্য যে চারজন সদস্য রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা সবাই মিলে ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করব। গ্রাহকরা যাতে তাঁদের টাকা ফেরত পান এবং ভবিষ্যতে কেউ যাতে আর প্রতারিত না হন, সে বিষয়ে চেষ্টা করব।’
বোর্ডের কাজ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, আদেশ পাওয়ার পরপরই বোর্ড মিটিংয়ে বসবে। কোথায় কী আছে সব কিছু বুঝে নেবে। বোর্ডের দায়িত্ব হলো টাকাগুলো কোথায় আছে, কোথায় দায় আছে, তা দেখা। সব কিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কম্পানিটির চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য উদ্যোগ নেবে। কম্পানি চলার অবস্থায় না থাকলে অবসায়নের আবেদনকারীর সঙ্গে বোর্ডও বসবে, কম্পানিটি অবসায়ন করতে হবে। আর যদি চালানো সম্ভব হয় তাহলে কম্পানিটি চলবে।
সম্প্রতি ফেসবুক পেজে ইভ্যালি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় তাদের ব্যাংক লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার খরচ ও কর্মীদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত কার্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ইভ্যালি। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ‘হোম অফিস’ করবেন এবং স্বাভাবিক সময়ের মতোই ‘সার্ভিস চালু’ রাখা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু গত শনিবার ইভ্যালি তার ওয়েবসাইটও বন্ধ করে দেয়।
ই-কমার্সবিষয়ক কমিটির বৈঠক : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রধান সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সরকার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় এই কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রথম বৈঠকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষা করা যায়, এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ থেকে আমাদের আটটি বিষয়ে পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা; অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি এবং অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ; ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ; প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও পরিবীক্ষণের জন্য ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ; ই-কমার্সের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন তদারকি করা এবং এগুলোকে করের আওতায় নিয়ে আসা।
সফিকুজ্জামান বলেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেন কিভাবে হবে, তাদের সম্পদ উদ্ধার করা এবং ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে। এ ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানকে পেমেন্ট গেটওয়ের আওতাভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। এর জন্য গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে এসক্রো সার্ভিস চালুও করা হয়েছে।