মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই

চলতি সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের মুহূর্তে এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে মার্কিন বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সাত বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ফলে পণ্যটির উল্লেখযোগ্য ভোক্তারা তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। খবর রয়টার্স।

মহামারীকালীন সংকট কাটিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারের ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পরও ধীরে ধীরে জ্বালানি তেলের উত্তোলন আগের অবস্থায় নিয়ে আসা হবে বলে জানায় ওপেক প্লাস। ওপেক জানায় পূর্ববর্তী চুক্তি অনুযায়ী সংস্থাটির সদস্যরা নভেম্বরজুড়ে প্রতিদিন চার লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল উত্তোলন চালিয়ে যাবে। চলতি সপ্তাহে সংস্থাটি এমন বিবৃতি দেয়। ওপেকের বৈঠক সামনে রেখে অনেকে মনে করেছিলেন সরবরাহ সংকটের এ সময়ে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে পারে সংস্থাটি।

অন্যদিকে মার্কিন সরকার জানায়, তারা জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে পণ্যটির দাম কমিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। যেমন পেট্রোলিয়ামের কৌশলগত মজুদ বাজারে উন্মুক্ত করা, যা জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

মার্কিন জ্বালানি বিভাগ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এজেন্সি অংশীদারদের সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে যাবে। একই সঙ্গে উপযুক্ত সময় ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। জ্বালানি বিভাগ জানায়, তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা মার্কিন প্রশাসনের নেই।

চলতি সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের ভবিষ্যৎ বাজারমূল্য বেড়েছে ৪৪ সেন্ট। দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে বর্তমানে ব্রেন্ট ক্রুডের ভবিষ্যৎ বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৮২ ডলার ৩৯ সেন্টে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে পণ্যটির বৈশ্বিক বাজার আদর্শ তিন বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। এ সময় বৈশ্বিক বাজার আদর্শে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের মূল্য ছিল ৮৩ ডলার ৪৭ সেন্ট।

একই সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে ১ ডলার ৫ সেন্ট। ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধিতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম দাঁড়ায় ৭৯ ডলার ৩৫ সেন্ট। শুক্রবার ডব্লিউটিআই ক্রুডের সর্বোচ্চ মূল্য স্পর্শ করে ৮০ ডলার ১১ সেন্ট, যা ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর থেকে মার্কিন বাজার আদর্শ অনুসারে সর্বোচ্চ দাম। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম টানা সাত সপ্তাহের মতো বৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। ২০১৩ সালের পর এটিই টানা কয়েক সপ্তাহের মতো পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা। চলতি বছরে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই ক্রুড উভয় বাজার আদর্শে জ্বালানি পণ্যটির দাম ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

শুক্রবার একই সময়ে ইউএস গ্যাসোলিনের ভবিষ্যৎ বাজারমূল্য ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ দরে পৌঁছায়। এ সময়ে প্রতি গ্যালন আরবিওবি গ্যাসোলিনের মূল্য ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধিতে ২ ডলার ৩৭ সেন্টে পৌঁছায়।

নিউইয়র্কের অ্যাগেইন ক্যাপিটালের অংশীদার জন কিলডুফ বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মৌলিক কারণ হলো সরবরাহ চেইনে কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হওয়া, যা ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অনুঘটন হিসেবে কাজ করছে। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে পণ্যটির বাজার ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। তবে অনেকের আশঙ্কা, শীতকালীন আবহাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ চেইনে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এদিকে বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে নিজেদের কয়লা খনিগুলোতে উত্তোলন বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে চীন।

ব্যাংক অব আমেরিকার কর্মী ক্রিস্টোফার কুপ্লেন্ট বলেন, জ্বালানি শক্তির বিকল্প উৎসগুলো, যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মূল্যবৃদ্ধির ফলে জ্বালানি তেলের বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকি তৈরি হতে শুরু করেছে।