বদলে যাবে নতুন-পুরান ঢাকা, ফিরে পাবে নগরীর প্রাণ-প্রকৃতি

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে শিগগিরই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) গেজট প্রকাশ হচ্ছে। এতে বদলে যাবে নতুন ও পুরান ঢাকার দৃশ্য। দখল-দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে। ফিরে পাবে নগরীর প্রাণ-প্রকৃতির। কমবে নগরবাসীর দুর্ভোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমাতে ও নাগরিক সেবার মান বাড়ানোসহ নানা স্বপ্ন দেখিয়ে ২০১০ সালে ড্যাপ পাস করে সরকার। এরপর এ ড্যাপ চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ১১ বছরেও নতুন করে ড্যাপ চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে এই সময়ে কমিটি ড্যাপে দুই শতাধিক সংশোধনী এনেছে। তবে এবার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ আগামী মাসের মাঝামাঝিতে ড্যাপের গেজট প্রকাশ হচ্ছে বলে রাজউক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প এলাকা, বিনোদন পার্ক, খেলার মাঠ, লেক, সাংস্কৃতিক বলয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টারসহ সামাজিক চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ চিহ্নিত হচ্ছে এ ড্যাপে। এতে বিভিন্ন এলাকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে ড্যাপে জনঘনত্ব জোনিং বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নির্ধারণ ও সে মোতাবেক ভ‚মি ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা সংস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

এদিকে, নতুন এ ড্যাপে নগরের প্রতিটি আবাসিক এলাকার ভবন হবে একই উচ্চতার। প্রতি ওয়ার্ডে থাকবে স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি ক্লিনিক। থাকবে খেলার মাঠ এবং মুক্ত জায়গা। কৃষিজমি, জলাশয়, বনাঞ্চল থাকবে উন্মুক্ত। যানজট কমাতে শহরের চারপাশে রিং রোডের পাশাপাশি খাল-নদীতে থাকবে নৌপথ, চলবে ওয়াটার বাস। পথচারীদের জন্য চওড়া ফুটপাত আর পৃথক অঞ্চলে হবে বাণিজ্যিক কল-কারখানা। আর তাতে দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে নগরীর প্রাণ-প্রকৃতির।

রাজউক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ড্যাপ চূড়ান্তের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি খুব সহজ ছিল না। ২০ বছর মেয়াদি এ উদ্যোগের অনুমোদন পেতেই কেটেছে পাঁচ বছর। পদে পদে ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। এখন সব ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে প্রকাশের অপেক্ষায় ড্যাপ গেজেট।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বহু মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। এখন প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা ড্যাপ গেজেট যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলে নগরীর দৃশ্য পাল্টে যাবে। বিশেষ করে নতুন ও পুরান ঢাকার সব সমস্যা সমাধান হবে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমবে। রাজউক সূত্র জানা গেছে, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথমে (১৯৯৫-২০১৫) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) নেওয়া হয়েছিল। ২০১০ সালের জুনে ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ হলেও তাতে নানা অসঙ্গতি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি ছিল বাস্তবতার উল্টো। পরে ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য সাত মন্ত্রীকে নিয়ে একটি ‘মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠন করে দেয় সরকার। এ কমিটিকে ড্যাপ রিভিউ কমিটিও বলা হয়। পরে আবারও ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাস্তবে রূপ পায়নি ওই পরিকল্পনা।

জানা যায়, ২০১৫ সালের মার্চে এ প্রকল্পের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান শেলটেক (প্রা.) লিমিটেড ও ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগের ড্যাপের ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন এবং স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে একটি জনবান্ধব, বাস্তবসম্মত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ২০১৬-২০৩৫ প্রণয়নই রাজউকের চলমান ড্যাপ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এখন ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়নের কাজ চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে। ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার অনেক চিন্তা ভাবনা করেই সবার মতামতের ভিত্তিতে ড্যাপ তৈরি হয়েছে। এবার আমরা ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করছি। এতে মানুষ নিজের ও আশপাশের ভূমির ব্যবহার এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন।

এছাড়া, ড্যাপ বাস্তবায়নে সব ধরনেরই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ড্যাপ গেজেট এবং তা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি ড্যাপ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সাথে অন্যান্য অংশীজনের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের আগে জাতীয় সম্মেলন হবে। সম্মেলনের সাতদিন আগে প্রত্যেক অংশীজনদের একটি করে ড্যাপের কপি দেওয়ার কথা। তখন আমরা তা পর্যালোচনা করবো। জাতীয় সম্মেলনে মতামত দেবো। সবাই সম্মতি দিলে এ ড্যাপ গেজেট হবে। তবে সেটা শিগগিরই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।