‘প্রকট হচ্ছে আয় বৈষম্য, কর্মসংস্থান বাড়ানোর তাগিদ’

মহামারি করোনার ভেতরে তীব্র আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্য।  বেশিরভাগ মানুষের আয় কমলেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে।  এসময়ে একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে।  এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যা ছয় মাস আগেও ছিল প্রায় ৯৪ হাজার। অপরদিকে এক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছয় মাসে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য বলছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দারিদ্রের কষাঘাতে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব ছিল অনেক বেশি। করোনার আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। দেশে থাকা লকডাউনের প্রভাব আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।

এছাড়াও বৈষম্য বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়, দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য এসব দেশের আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়লেও দেশে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা- বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। এসময় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগে করছেন না। ফলে একদিকে যেমন বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের এসব অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা হচ্ছে, বাড়ছে ধনীদের সংখ্যা।

এজন্য সরকারকে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। আর তা না হলে দেশে আয়-বৈষম্য আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।