পুঁজিবাজারে পতন আতঙ্ক, ভয়….

টানা পতনের মধ্যে পুঁজিবাজারে  দিনের শুরুতে বাজার ছিল চাঙাভাব। দুপুর সাড়ে ১২টায়ও সূচক আগের দিনের চেয়ে ৭১ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। কিন্তু পরের দুই ঘণ্টায় সেখান থেকে সূচক পড়ে ১৪৭ পয়েন্ট। টানা সাত দিনে সূচক পড়ল ৩০৪ পয়েন্ট।

টানা ছয় দিন বড় পতন হলো পুঁজিবাজারে।

গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর ধসের মধ্যে পড়তে হয়নি পুঁজিবাজারকে। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বহু কোম্পানির শেয়ারে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে যে দর সংশোধন শুরু হয়, তা টানা পঞ্চম সপ্তাহে গড়ানোর পর শুরু হয় ধস। আগের চার সপ্তাহ ছোট মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও এই সপ্তাহে এসে বড় মূলধনি মৌলভিত্তির বহু কোম্পানির শেয়ার দরও কমতে থাকে।

এর মধ্যে গত ১৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবস সূচক পড়ার যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে সোমবারের লেনদেন।

এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে চাঙাভাবের মধ্যে এই চিত্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার পর সেদিন রাতেই পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের বৈঠকে ডাকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মঙ্গলবার বিকেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে এই বৈঠক হবে।

বৈঠক ডাকার পর দিনের শুরুটা ভালোই ছিল। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে সূচক বেড়ে যায় ৮৯ পয়েন্ট। দুপুর সাড়ে ১২টায়ও সূচক আগের দিনের চেয়ে ৭১ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল।

এরপর থেকেই শুরু হয় পতন। এর পরের দেড় ঘণ্টায় সেখান থেকে সূচক পড়ে ১৬৯ পয়েন্ট। বেলা ২টা নাগাদ আগের দিনের চেয়ে ৮৬ পয়েন্ট পতনে চলছিল লেনদেন। শেষ আধা ঘণ্টায় সেখান থেকে কিছুটা বেড়ে লেনদেন শেষ হয় ৭৬ পয়েন্ট পতনে।

এ নিয়ে গত সাত কর্মদিবসে সূচক পড়েছে ৩০৪ পয়েন্ট। গত ৫ সেপ্টেম্বরের নিচে নেমে গেছে পুঁজিবাজার।

টানা সপ্তম দিনের পতনে শেয়ার মূল্য তুলনামূলক কম কমেছে ব্যাংক খাতে। তবে গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় লেনদেনে দেখা গেছে চাঙাভাব। অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে এই খাতে। মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশেরও বেশি হয়েছে এই একটি খাতেই।

অন্যদিকে শেয়ার দর বেড়েছে বিমা খাতে। সাধারণ বিমা খাতের ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ৭টির দর। জীবন বিমা খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১২টির দর, কমেছে দুটির।

বড় পতন হয়েছে বিডি ল্যাপস, এনআরবিসি ব্যাংক, আরডি ফুড, বিচ হ্যাচারি, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। এই কোম্পানিগুলোর দর ৭ থেকে ১১ শতাংশ কমেছে।

এ ছাড়া ৬ শতাংশের বেশি ও ৭ শতাংশের কম দর কমেছে ১১টি কোম্পানির, ৫ শতাংশের বেশি ও ৬ শতাংশের কম দর কমেছে ৮টি কোম্পানির, ৪ শতাংশের বেশি ও ৫ শতাংশের কম কমেছে ২৩টি কোম্পানির দর। ৩ শতাংশের বেশি ও ৪ শতাংশের কম কমেছে আরও ৩২টির দর।

সব মিলিয়ে দাম কমেছে ২৫৪টি কোম্পানির শেয়ারের। বেড়েছে ৮৭টির।

অন্যদিকে যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যেটির, সেটির বেড়েছে ৯.৩৩ শতাংশ। বাকিগুলোর মধ্যে ৮ শতাংশের বেশি বেড়ে একটির দর, ৬ শতাংশের বেশি একটির, ৫ শতাংশের বেশি একটির, ৪ শতাংশের বেশি দুটির, ৩ শতাংশের বেশি ৫টির, ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে ১০টি কোম্পানির শেয়ার দর।

সূচক পতনে সবচেয়ে প্রধান ভূমিকায় ছিল লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি, এনআরবিসি, গ্রামীণফোন, পাওয়ারগ্রিড, তিতাস গ্যাস, বেক্সিমকো লিমিটেড ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। এই ১০টি কোম্পানিই সূচক কমিয়েছে ৪৪.০৮ পয়েন্ট।

অন্যদিকে সূচক টেনে তোলায় ভূমিকা ছিল যে ১০টি কোম্পানির, সেগুলো সম্মিলিতভাবে বাড়াতে পেরেছে মাত্র ১৪.৬৯ শতাংশ। এর কারণ এগুলোর দাম বাড়লেও হয় বৃদ্ধির হার কম, নয় পরিশোধিত মূলধন কম।

কোম্পানিগুলো হলো ডেল্টা লাইফ, ওয়ালটন, মেরিকো, ইউনাইটেড পাওয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনিলিভার, মবিল যমুনা, লিনডে বিডি, বিকন ফার্মা ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স।