ফারুক আহমেদ:
সন্ধ্যার নামতা
একটি সন্ধ্যা তোমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো
বাতাসে উড়তে থাকা সে সন্ধ্যা ফুটে আছে
যোসিফিনের গোলাপের মতো।
সন্ধ্যা একটি বাগান, সে বাগানের মালিক তুমি
বাগানে ফুটেছে তোমার পেলব অধর,
সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে তোমার হাসির রেখা
তুমি কথা দিয়ে আঁকছো মুগ্ধতার বুদ্বুদ।
এইভাবে তুমি হয়ে ওঠো এক অলৌকিক শরীর।
আমি তোমাতে আসি, মনে হয় এই সন্ধ্যাটা
যেটা আসলে তুমি, হয়ে যাচ্ছো একটি লতানো মুগ্ধতা।
আমাকে পেঁচিয়ে ধরে নিয়ে নিচ্ছো তোমারই ভেতর।
আমি ডুবে যাচ্ছি, হচ্ছি বিলীন, একটি সন্ধ্যায়
একটি উদ্যানের ঘোরগ্রস্ততায়।
গোলাপচাষের নতুন ভূমি
শহর উদ্যানহীন এক পরিতাপের মতো জাগছে
শহরে কংক্রিট আর নির্দয়তার দেয়াল উঠে যাচ্ছে।
শহরে লতানো গাছের মতো বেড়ে উঠছে যে হাসি;
তাতে আশ্বাসফল নয়, জন্ম নিচ্ছে অভিনয়ের বারুদ।
আমরা দেয়াল পেরুতে পারছি না, বারুদে যাচ্ছি নিভে।
এ শহর আমাকে নিচ্ছে, আমি শহরকে নিতে পারছি না।
শহর কংক্রিটের, শহরে অট্টালিকা ছড়িয়ে পড়ছে
কথা হচ্ছে শুধু অট্টলিকার সঙ্গে অট্টালিকার
শহর জুড়ে আমরা আছি, আর আমাদের আছে হৃদয়।
কত হৃদয় এ শহরে—লক্ষ, কোটি, তারও বেশি কি!
শহর জুড়ে যে জায়গা তা আমরা রাষ্ট্রকে দিয়ে দিবো
শহরকে আমরা নিবো, শহর আমাদের হৃদয়ে যাবে।
তারপর,
তারপর, আমাদের হৃদয়ের জায়গা জুড়ে হবে উদ্যান;
আমরা তাতে গোলাপের চাষ করব, কাঠগোলাপেরও।
আমাদের দেখা হলে বলব—
তোমার বুক থেকে যে জহুরিচাঁপার ঘ্রাণ বেরুচ্ছে
এটা পেলে কোথায়! আমাকে একটা চারা দিও।
আমরা হৃদয়জুড়ে গোলাপের চাষ করে পৃথিবীকে দিবো
গোলাপচাষের নতুন এক ভূমি।
আদিম কবিতা
আদিমকালে অধরের বাস ছিল গুহায়। গুহায় বসবাসরত সে অধর ঘর্ষণে যে স্ফূলিঙ্গ জন্মালো তাই মানুষকে আদিমতা থেকে ঘুরিয়ে দিলো সভ্যতার দিকে।
তেমনি একটি স্ফূলিঙ্গ সারা শরীর ঘিরে কুণ্ডলি পাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে তোমার সঙ্গে আমার যাতায়াতের যে সাঁকো তা তৈরি চুমু দিয়ে। মনে হচ্ছে আজ চুমু-তারিখ। মনে হচ্ছে আমি রাখাল চুমুর পাল নিয়ে যাচ্ছি তোমার বাড়ির দিকে। যাচ্ছি, কারণ সান্ধ্যচুমুটা যে মণিপুরচক্র থেকে নিসৃত সে চক্রের ঠিকানা লুক্কায়িত তোমার ভেতর। তার থেকেই উঠে এলো চুমুর সাধনা।
বোধিচিত্ত থেকে বেরিয়ে আসে প্রজ্ঞা ও উপায়, তেমনি তোমার ঠোঁট থেকে আসে উড্ডীনশীল ও গহীন চুম্বন—যা সুরারোপিত রহস্যে নিবিড়। তুমি চুমুতন্ত্রের তান্ত্রিক, চুমুরা তোমার পোষা। এই যে দেখো, তোমার ইশারা ছাড়া একটা চুমুচাপাতিও চলে না। আবার তোমার একটা ইশারাই বাঁধিয়ে দিতে পারে চুমুজট।
যা হোক, চুমু তোমার দখলে। তুমি চুমুতন্ত্রের তান্ত্রিক। তুমিই জানো, কী করে অধরে অধরে লেগে যে স্ফূলিঙ্গ—তার থেকে জন্ম নেয় সভ্যতা। যে সভ্যতার সঙ্গে লেগে থাকে অপার সম্ভাবনা এবং বিপুল বিশৃঙ্খলার ঠিকানা।