রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাজধানীর ভেতরে তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাড়তি চাপের কারণে প্রবেশপথগুলোতে জনভোগান্তি অনেক বেশি। এ ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট) ও বিআরটি ( বাস র্যাপিড ট্রানজিট) নির্মাণের কাজ। এই অবস্থায় গণপরিবহনের চাপ সামলাতে খাবি খাওয়ার দশা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। সেজন্য জনভোগান্তি ও পরিবহনের চাপ কমাতে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানী থেকে টার্মিনাল তিনটি সরিয়ে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের জন্য ঢাকার প্রবেশপথে নির্মাণ করা হবে ৯টি বাস। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে।
ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর ডিটিসিএ’র ১৩তম সভায় মহানগরী থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরানোর উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় সভাপতির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে ঢাকা মহানগরী থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে। এজন্য স্থান নির্ধারণসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার পরিবহনসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে।’
ডিটিসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন। এছাড়া ফকিরাপুল, পান্থপথ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার ও ডিপো। সেসব দূরপাল্লার বাস দিনে-রাতে সমানে রাজধানীতে ঢুকছে বলে নগরীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। পরিকল্পিতভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকার ভেতরের টার্মিনালগুলোয় শুধু সিটি সার্ভিসের বাসগুলো রাখা হবে। আন্তঃজেলা পরিবহনের জন্য নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। আশা করা যায়, এতে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ফিরবে শৃঙ্খলা, নিরসন হবে যানজটও।
ঢাকার প্রবেশপথে ৯টি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সাল মেয়াদী এ প্রকল্পের আপাতত লক্ষ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি। এরপর শুরু হবে মূল প্রকল্পের কাজ।
ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও ডিপোর জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে−ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে ঝিলমিল তেগুরা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশ, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পশ্চিম পাশ, গাজীপুর-ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশ, উত্তরা-বিরুলিয়া এমআরটি লাইন-৬ এর কাছাকাছি, আতিবাজার-বসিলা এবং রাজউক-পূর্বাচল ঢাকা বাইপাসের দক্ষিণ পাশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর, দক্ষিণসহ পাশ্ববর্তী সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ডিটিসিএ, পরিবহন মালিকপক্ষ ও পৌরসভার মেয়রদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পূর্বাচল-ঢাকা বাইপাসের দক্ষিণ পাশের টার্মিনালটি নির্মাণের লক্ষ্যে ডিটিসিএকে জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রাজউককে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিটিসিএ’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর ভেতরে চলবে শুধু সিটির গণপরিবহন। আর আন্তঃজেলা পরিবহনের জন্য ঢাকার প্রবেশপথে নতুন করে টার্মিনাল করা হবে। এর ফলে রাজধানীতে যানজট-ভোগান্তি কমবে।’
তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ কী প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা যাবে সেজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে সমীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। অক্টোবর থেকে সমীক্ষা চলছে। এখন কনসালট্যান্ট (পরামর্শক) নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।’