ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শুকপাটুলী গ্রামে কোরআন অবমাননার অভিযোগে আকবর আলী (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে গ্রাম সালিসে জুতারমালা পরিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে। তিন মাস দশ দিন ওই বৃদ্ধকে গ্রামে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বিচারকরা। তিনি নিজে কাফেরসহ তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে বলেও ফতোয়া দেওয়া হয়েছে।
১২ অক্টোবর শুকপাটুলী বাজারে দুপুর ১২ টায় তিন থেকে চার শতাদিক মানুষের উপস্থিতে এ গ্রাম সালিস অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হেকিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি সালিসে যেতে পারিনি। তবে ঘটনা আমি শুনেছি।
এলাকাবাসী ও আকবরের স্ত্রী অজুফা খাতুন জানান, ১১ অক্টোবর সকালে ছোট মেয়ে রহিমার জামাই মনজুরুল ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে। বড় মেয়ে আয়েশার সঙ্গে ছোট মেয়ে রহিমার পাওনা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঝগড়া চলে আসছে। ছোট মেয়ের জামাই ও তার সাথে আসা লোকজন আমার বৃদ্ধ স্বামী আকবর আলীকে (৬৫) কোরআন ছুয়ে কথা বলার জন্য বললে তিনি কোরআনের উপর এক পা রেখে শপথ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যাওয়ার সময় নিজের ভুলের বিষয়ে ক্ষমা চান।
১২ অক্টোবর বিষয়টি জানাজানি হলে সকাল ১১ টার দিকে শুকপাটুলী বাজারে তিন থেকে চার শতাদিক মানুষের উপস্থিতে গ্রাম সালিস অনুষ্ঠিত হয়। ওই গ্রাম সালিসে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মকবুল হোসেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রমজান আলী মাস্টার, বটতলা মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান, শুকপাটুলী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা কুতুব উদ্দিনের উপস্থিতে আকবর আলী নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে সকলের কাছে ক্ষমা চান। নিজের ভুলের বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরও গ্রাম সালিসে উপস্থিত মাতব্বররা বৃদ্ধ আকবর আলীর জুতার মালা গলায় দিয়ে গ্রামে ঘুরিয়ে ৩১০ দিন গ্রামে আসতে বারণ করেন। তার স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে নতুন করে তাদের বিয়ে পড়ানোসহ কালিমা পড়ে মুসলমান হওয়ার ফতোয়া জারি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে ওই বৃদ্ধ গ্রাম ছাড়া। কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছেন না। বৃদ্ধ আকবর আলীর স্ত্রী অজুফা জানান, আমার স্বামীর বয়স হয়েছে। কখন কি করে। কি বলে তার ঠিক নেই। গ্রাম সালিসের পর থেকে তার বৃদ্ধ স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। বুড়া মানুষ কোথায় যায় কি খায় কে জানে বলে চোখের কোনে জল মুচেন। চাপা কণ্ঠে তিনি বলেন, আমারও নাকি তালাক হয়ে গেছে। আবার নাকি বিয়ে পড়াবে। বৃদ্ধ আকবর আলীর নাতনী হালিমা খাতুন জানান, দাদা কোথায় আছে আমরা কেউ জানি না। সমাজ বিচার করছে না মেনে কি উপায় আছে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আসলে অন্যায় করলে তো শাস্তি পাবেই। ধর্মীয় রীতিতে যে শাস্তি আছে তার চেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
রমজান আলী মাস্টার বলেন, ‘আমরা সমাজে বসবাস করি। আমরা কোনো শাস্তি দেই নাই। হুজুররা যে ফতুয়া দিয়েছে তাকে তার চেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তিন মাস দশ দিন সে বাড়িতে আসতে পারবে না। সামাজিকভাবে তাকে এক ঘরে করা হয়েছে।’
মুক্তাগাছা থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ফতোয়া দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। সূত্র: বাংলানিউজ।