কক্সবাজারের ভুগর্ভস্থ পানিতে উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয় ভারী খনিজ ইউরেনিয়ামের দূষণ পাওয়া গেছে। একই ধরনের উপাদান থোরিয়ামেরও উচ্চমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। মোনাজাইট ও জিরকন থেকে এ দুটি উপাদান ভূগর্ভের পানিতে মিশছে। সর্বশেষ এক গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের উপর তেজস্ক্রিয় ভারী খনিজের প্রভাব সম্পর্কে অনুসন্ধান করে একটি গবেষণাপত্রে এমনটি দাবি করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে ভূমি ও পানির ব্যবহারের পরিণতিতে থোরিয়াম ও ইউরেনিয়াম ছড়িয়ে পড়ে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
ইউরেনিয়ামের এই দূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘সোর্সেস অফ ইউরেনিয়াম এন্ড থোরিয়াম ইন এ পালেওবিচ গ্রাউন্ডওয়াটার অ্যাকুইফার এট কক্সবাজার, সাউথইস্ট বাংলাদেশ’ শিরোনামের গবেষণাটি জার্নাল সায়েন্স ডাইরেক্ট এ প্রকাশিত হয়েছে।
ময়মনসিংহে অবস্থিত কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষকদল সম্প্রতি কক্সবাজারের ভূ-গর্ভস্থ মাটি ও পানি নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর তারা জাপানে নমুনা পরীক্ষায় এ ফলাফল দেখতে পান।
পরীক্ষায় দেখা যায়, কক্সবাজারের ভূগর্ভে থাকা জিরকন ও মোনাজাইটে ৮৫০.৭ পিপিএম ( পার্টস পার মিলিয়ন বা ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ) থেকে ৯৯০.৬ পিপিএম মাত্রার ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়। এটি সিলেট ও মৌলভীবাজারের আকরিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উন্নত মানের। ২০১৫ সালে ওই দুই এলাকায় প্রায় ৫০০ পিপিএম মাত্রায় ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়।
গবেষক আশরাফ সিদ্দিকী সংবাদমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজারের গবেষণাটির জন্য ভূ-পৃষ্ঠ থকে শুরু করে ১৮ দশমিক ৯ মিটার গভীর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানান, গবেষণায় কক্সবাজারে ১.১ থেকে ৩৩.৪ পিপিএম পর্যন্ত ইউরেনিয়াম এবং ৬.৩ থেকে ২০২.৩ পিপিএম পর্যন্ত থোরিয়াম পাওয়া গেছে। আর কক্সবাজারের মাটিতে মোনাজাইটের হার ৩.২৮ শতাংশ এবং জিরকনের হার ২.৩৬ শতাংশ। এ দুটি আকরিকই আবার থোরিয়াম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ। সাধারন মাত্রায় এতে থোরিয়াম থাকে ২৭৫.৫ থেকে ৩১৮.৪ পিপিএম। আর ২৫৬.৩ পিপিএম থেকে ২৯০.৫ পিপিএম ইউরেনিয়াম থাকে।
গবেষকরা মাত্র তিন মিটারেরও কম গভীরতা থেকেই এসব আকরিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। গত কয়েক বছর আগে কক্সবাজারের ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ পিপিএম মাত্রার ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পান ড. আশরাফ, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা হু নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ গুণ বেশি। হু নির্ধারিত সহনীয় মাত্রা হল ২ পিপিএম। এ ফলাফলের পরই কক্সবাজারের মাটিতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম থাকার সম্ভাবনা থেকে সম্প্রতি ওই জরিপ চালানো হয়।
দেশে ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলেও এগুলো এখনই ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ আকরিক থেকে পৃথক করার জন্য কোনো কেন্দ্র এখনও দেশে স্থাপিত হয়নি।