‘যৌন আকাঙ্ক্ষা’ মেটাতে নিজের পা কেটে ফেলে বিমার অর্থ দাবি, কারাগারে সার্জন

অস্বাভাবিক যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর বিকৃত চিন্তা জেঁকে বসেছিল এক ব্রিটিশ সার্জনের মাথায়। আর তা থেকে ইচ্ছা করেই ড্রাই আইস (হিমায়িত কার্বন ডাই-অক্সাইড) ব্যবহারের মাধ্যমে পা ঠান্ডা করে ফেলতেন তিনি। বারবার এটি করতে গিয়ে পা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে দুই পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন। তা-ও আবার নিজেই নিজের পা দুটি কেটে ফেলেন।
এদিকে এ ঘটনাকে পুঁজি করে এই সার্জন বিমার অর্থ আদায়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। মিথ্যা করে বলেন, অসুস্থতার কারণে পা কেটে ফেলতে হয়েছে। পরে বিমার অর্থ বাবদ প্রায় পাঁচ লাখ পাউন্ড আদায় করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। জালিয়াতি ধরা পড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার জালিয়াতির অভিযোগে এ সার্জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম নিল হপার। তিনি একজন ভাসকুলার সার্জন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে ৩২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তদন্তে জানা যায়, হপার বিমা কোম্পানিকে মিথ্যা করে বলেছিলেন যে তাঁর পা সেপসিসের কারণে কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ তাঁর নিজের কর্মকাণ্ডের কারণেই পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।
হপারের পুরোনো রোগীরা আতঙ্কে আছেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের (এনএইচএস) কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও রোগীদের আশঙ্কা, হপার যে চিকিৎসা দিয়েছেন, তা হয়তো তাঁদের প্রয়োজন ছিল না। এসব রোগী এখন আইনি পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
হপার বিকৃত পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণসংক্রান্ত আরও তিনটি অভিযোগ স্বীকার করেছেন। হপারের পুরোনো রোগীরা আতঙ্কে আছেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের (এনএইচএস) কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও রোগীদের আশঙ্কা, হপার যে চিকিৎসা দিয়েছেন, তা হয়তো তাঁদের প্রয়োজন ছিল না। এসব রোগী এখন আইনি পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
হপার ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রয়েল কর্নওয়াল হাসপাতালের এনএইচএস ট্রাস্টে কাজ করতেন। একসময় তিনি গ্রেপ্তারও হন। পরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মেডিকেল রেজিস্ট্রার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে করা আবেদনের ওপর আদালতে শুনানিও হয়েছে। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হপারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তাঁর পেশাগত কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাঁর রোগীদের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে হপারের পুরোনো রোগীদের কেউ কেউ, এমনকি পা কেটে ফেলা হয়েছে, এমন রোগীরাও এখন চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘এনাবেল ল’-এর শরণাপন্ন হচ্ছেন। কারণ, তাঁরা তাঁদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হপারের বিরুদ্ধে ট্রুরো ক্রাউন কোর্টে শুনানি করেন বিচারক জেমস অ্যাডকিন। শুনানিতে বলা হয়, মারিয়াস গুসতাভসন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে হপারের তথ্যগুলো বেরিয়ে আসে। গুসতাভসন একটি পর্ন ওয়েবসাইট চালাতেন।
গত বছর ওল্ড বেইলি কোর্ট গুসতাভসনকে যাবজ্জীবন (ন্যূনতম ২২ বছর) কারাদণ্ড দেন। গুসতাভসন বিপজ্জনকভাবে জীবিত মানুষের অঙ্গ কেটে অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন আনা–সংশ্লিষ্ট এক চক্রের নেতৃত্ব দিতেন। চক্রটি যৌনাঙ্গসহ বিভিন্ন অঙ্গ অপসারণ করত। এমনকি ১৬ বছরের কম বয়সী, তথা কিশোরদের ক্ষেত্রেও এমন নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া চালাত চক্রটি।
আদালতের শুনানিতে বলা হয়, এভিভা ও ওল্ড মিউচুয়াল হেলথ নামের দুই বিমা কোম্পানিকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন হপার। বলেছিলেন যে তাঁর পা রোগের কারণে কেটে ফেলতে হয়েছে, নিজের করা ক্ষতির কারণে নয়।
শুনানিতে আরও বলা হয়, হপার ২০১৯ সালের এপ্রিলে ড্রাই আইস দিয়ে পা এতটাই ঠান্ডা করেছিলেন যে তা কার্যক্ষমতা হারায় ও কেটে ফেলতে হয়। এটি তাঁর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আর এর সঙ্গে তাঁর বিকৃত যৌন তৃপ্তি মেটানোর আকাঙ্ক্ষা যুক্ত ছিল।
পা কেটে ফেলার পর হপার বিমা কোম্পানির কাছ থেকে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৩ পাউন্ড আদায় করেন। এ অর্থ খরচ করেন একটি ক্যাম্পারভ্যান, হট টব, কাঠের চুলা ও বাড়ি নির্মাণে।
কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি বিচারক হপারের জন্য ১০ বছরের ‘সেক্সুয়াল হার্ম প্রিভেনশন অর্ডার’ (বিশেষ বিধিনিষেধ) দেন। প্রতারণার মাধ্যমে হপার যে অর্থ আদায় করেছেন, তার কিছুটা ফেরত পাওয়ার জন্য তদন্ত করতে সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন আদালত। হপার তাঁর বাড়িটিও হারাচ্ছেন বলে শুনানিতে বলা হয়েছে।
২০২৩ সালে হপার তাঁর পা কেটে ফেলার বিষয়ে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন। ওয়েলস ভাষার চ্যানেল এসফোরসির একটি তথ্যচিত্রেও কথা বলেছেন তিনি।
হপার ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্রতিবন্ধী নভোচারী খোঁজার কার্যক্রমে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল ২০২৩ সালের এপ্রিলে হপারের চিকিৎসা কার্যক্রমের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।