সমরেশ বসুর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সমরেশ বসুর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার। তিনি প্রজাপতি উপন্যাস লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই গুণী লেখকের।

১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে সমরেশ বসু জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের বন্দুক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি।

সমরেশ বসুর ছদ্মনাম ছিলো ‘কালকূট’। যার অর্থ তীব্র বিষ।

১৯৪৯-৫০ সালে জেল খাটতে হয় সমরেশ বসুর। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।

‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’, ‘কোথায় পাব তারে’সহ অনেক উপন্যাস লিখেছেন। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট ‘গোয়েন্দা গোগোল’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।

লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। ‘চিরসখা’ নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু।

ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি ১৯৫৯ ও ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে আমৃত্যু ক্রিয়াশীল ক্ষণজন্মা লেখকের মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিলো দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’।

সমরেশ বসুর বিখ্যাত প্রজাপতি বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৬৭ সালের শারদীয় দেশ পত্রিকায়। বই হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। প্রথম প্রকাশের পর বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ আসতে সময় নিয়েছিল ১৭ বছরের মতো। কেন? কারণটা কিন্তু বেশ মজার। সমরেশ বসুর এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিলো ১৭ বছর।

‘প্রজাপতি’ উপন্যাস অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। রায়ে বলা হয়, অশ্লীল উপন্যাস লেখার জন্য লেখক সমরেশ বসুকে কোনো মতেই অব্যাহতি দেওয়া যায় না। তা তিনি যত বড় লেখকই হোন না কেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯২ ধারা অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত লেখককে ২০১ টাকা জরিমানা করে, অনাদায়ে দু’মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। প্রকাশকেরও একই সাজা হয়।