প্রসংগ: বদ নজর...
বদ নজর মানুষকে কবরে ঢুকায়

আবুল কালাম আজাদ :

সুরা কলম এর ৫১ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, এ কাফিররা যখন উপদেশবানী শোনে তখন এমনভাবে তোমার দিকে তাকায় যেন তোমার পদযুগল উৎপাটিত করে ফেলবে”।

সুরা ফালাকের ৫ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, (আশ্রয় চাচ্ছি) এবং হিংসুকের অনিষ্টকারীতা থেকে, যখন সে হিংসা করে”।
হযরত ইয়াকুব (আ:) তাঁর দশ সন্তানকে বাদশাহের দরবারে পাঠাবার সময় বলেছিলেন, তোমরা দশজন একসাথে একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেনা, বদনজর লেগে যেতে পারে।
আব্বাস (রা:) বলেন, তারা (কাফের) চোখ দিয়ে এরকম বদনজর দেয়, যাতে আপনি হালাক হয়ে যান।

ঈমাম ইবনুল কাইয়ুম (র:) বদ নজরের সঙ্গায় বলেছেন, কোন ব্যাক্তির কোন ভাল কিছু দেখলে বা কোন কিছু ভালো লাগলে তখন চোখ থেকে এমন একটি পাওয়ার বের হয় যার নেতিবাচক প্রভাবে ভালোলাগা ব্যাক্তি বা জিনিষের ক্ষতি হয়ে যায়- তাহাই বদনজর। সুতরাং কোরআন-হাদিস অনুযায়ী যাদু-টোনা আর বদ নজর স্বীকৃত বিষয়।
ঈমাম আল খাত্তাবী (র:) বলেন, বদ নজর মানুষকে কবরে ঢুকায় আর উটকে হান্ডিতে ঢুকায়। তিনি আরো বলেন, আল্লার তাকদিরের সাথে যদি কোন জিনিষ প্রতিযোগীতা করে তাহলে বদ নজর। রাসুল( সা:) বলেছেন, আমার উম্মাতের অধিকাংশ লোক মারা যাবে বদ নজরের কারনে।

বদ নজর দু’ রকম হয়: ১।হিংসুকের বদনজর, যা হিংসা করে দেয়। ২। হিংসা ছাড়া বা কোন খারাপ চিন্তা ছাড়া বদনজর। বদ নজর জ্বীন থেকেও হতে পারে আবার মানুষ থেকেও হতে পারে।

১। হিংসুকের বদ নজর: সমসাময়িক পর্যায়ের একজনের উন্নতিতে অন্যজন হিংসা করতে পারে। একই ক্লাশের এক ছাত্র অন্য ছাত্রকে হিংসা করে বদনজর দিতে পারে। পাশাপাশি জমিনের মালিক ভালো ফসল ওয়ালা জমিতে বদনজর দিতে পারে। নিজের নারিকেল গাছে নারিকেল না ধরার কারনে বেশী নারিকেল ধরা গাছে বদনজর দিতে পারে। বদ নজরের কারনে নারকেল পড়ে যাওয়া , ফসল জলে যাওয়া, পুকুরে মাছ মরে যাওয়ার বহু নজির রয়েছে।

২। হিংসা ছাডা বদনজর- হিংসা বা শত্রুতা না করেও বদ নজর লাগে। কারো সামনে ছোট বাচ্ছাকে খাওয়াচ্ছেন, উনি বলে বসল কি সুন্দরভাবে বাচ্চাটা খাচ্ছে। নজর লেগে যেতে পারে। আবু উমাম ইবনে সাহল বলেন, তাঁর পিতা সাহল ইবনে হানিফ গোসল করছিলেন। তাঁকে খালি গায়ে দেখে আমর ইবনে রাবিয়াহ (রা:) বললেন, হে সাহল তোমার গায়ের চামড়া আর রং এত সুন্দর যে আমি বিবাহযোগ্যা কোন কুমারীকেও এত সুন্দর দেখিনি। সাথে সাথে আমার পিতা পড়ে গেলেন। বিষয়টি রাসুল(সা:) কে জানানো হলে তিনি আমর ইবনে রাবিয়াহকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার ভাইকে হত্যা করতে চাও কেন।
নিজের বদনজর নিজের প্রতিও লাগে। আয়না দেখে বললেন, বাহ আমিতো দিনদিন সুন্দর আর স্বাস্হ্যবান হয়ে যাচ্ছি। নিজের ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ওতো বড় হয়ে যাচ্ছে বা বললেন কি সুন্দর খাচ্ছে। ছেলে ভালো ফলাফল করলো পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার করলেন, ছোট বাচ্চার খেলনারত অবস্হায় ছবি তুলে বা ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়লেন। বদ নজর লেগে যেতে পারে। এজন্য আল্লাহর সব নেয়ামত প্রচার করতে নেই, লুকিয়ে রাখতে হয়।
বদনজর থেকে বাঁচার উপায়:
১। সব সময় যিকিরের হালতে থাকা।২।সব সময় অজু অবস্হায় থাকা। ৩। নিজের বা প্রতিবেশীর ভালো কিছু দেখলে মাশাআল্লাহ বলা। ৪। সন্ধ্যা হবার পূর্বে ও পরে আধাঘন্টা দরজা-জানালা বন্ধ রাখা। ৫। দৈনন্দিন দোয়া সমুহে অভ্যস্ত হওয়া। ৬। আল্লাহর উপর পূর্ন তাওয়াক্কুল করা। ৭। শিরক-বিদআত পরিহার করা।৮। নিজের বা পরিবারের নেয়ামতসমুহ কম প্রচার করা।৯।কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি কাজ পরিহার করা। ১০। কোরআনের মাধ্যমে নিজেকে প্রটেকশানে নেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

লেখক : আবুল কালাম আজাদ

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।