মেয়ে হত্যার মামলা না নিয়ে বাবাকেই ডাকাতির মামলা দিলেন ওসি

 

পাবনায় মেয়ে হত্যার মামলা না নিয়ে উল্টো ডাকাতির মামলায় বাবাকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। হত্যার বিচার ও ওসির অপসারণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে মেয়ে আশা খাতুনের মৃত্যুর বিচারের আশায় পাবনার ফরিদপুর থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন বাবু। কিন্তু, মামলা না নিয়ে উল্টো তাকে ফাঁসানোর জন্য দেয়া হয়েছে ডাকাতি মামলা।

আশার মৃত্যুর পর নানাবাড়িতেই থাকছে তার মেয়ে আরিকা। যাদের নির্যাতনে মেয়েকে হারাতে হয়েছে, তাদের বিচার চান আশার বাবা-মা।

আশার স্বজনরা বলেন, ৪ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গোলকাটা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছফর আলীর সাথে বিয়ে হয় গোপালনগর গ্রামের আশা খাতুনের। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে থাকা অবস্থায় ননদের স্বামী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার জা আঙ্গুরি ও জাহানারা খাতুনের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে পরিকল্পিত ভাবে আশা খাতুনকে মারপিট করে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয় তারা। খবর পেয়ে আশার বাবার বাড়ির লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আশার পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আশা আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু আশার তিন বছরের শিশু সন্তান আরিকা তার নানাবাড়ি গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জানায়। সে জানায় তার মাকে তার বড়মা (চাচি) জাহানারা ও আঙ্গুরী পিটিয়ে ও গলাটিপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেছে। শেষে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো আশার বাবার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়।

পরে জামিনে বের হয়ে গত ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু পাবনার আমলি আদালতে ৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচারক মো. মুরাদ জাহান মামামলাটি গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য ফরিদপুর থানায় পাঠালেও পুলিশ মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

যাদের নির্যাতনে মেয়েকে হারাতে হয়েছে, তাদের বিচার চান আশার বাবা-মা। হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া, আশার বাবাকে ডাকাতির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ওসি আবুল কাশেমের অপসারণ দাবি করেছেন তারা।

আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, আমার মেয়ে হত্যার পর থানায় মামলা নেয়নি। ডাকাতির মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। কোর্টে মামলা করায় এখন নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতেও ওসি চাপ দিচ্ছেন।

এই বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত পাবনার ফরিদপুর থানার ওসি আবুল কাশেম।

এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সাথে ঘটনা তদন্তে ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।