কক্সবাজারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেখানে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সেখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো দেশে।
‘বিশ্বের বৃহত্তম গুচ্ছ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার বিপন্ন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ নিয়ে উঠে এসেছে বিস্তারিত তথ্য।
কক্সবাজার জেলা শহর ও সমুদ্রসৈকতের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এগুলো নির্মিত হলে সেখান থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড, কয়েক হাজার টন ছাই ও ৫ হাজার ৮০২ কেজি পারদ নির্গত হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ পড়বে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৩টি স্থাপন করা হবে বন্যাপ্রবণ এলাকা মহেশখালীতে। চিংড়ি, পান ও লবণ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ওই এলাকা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকার ওপর প্রায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল।
দেশে উৎপাদিত লবণের ৭০ শতাংশ আসে এই এলাকা থেকে। আর এখানে বছরে ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার মিষ্টি পান উৎপাদিত হয়। সবমিলিয়ে কক্সবাজারের হাজার কোটি টাকার পর্যটনশিল্পসহ সবকিছু ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার্স কিপারস বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলন
এদিকে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার্স কিপারস বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, সুন্দরবনের পাশে রামপালে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সেখানকার পরিবেশ বিপন্ন হতে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার কক্সবাজারে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে যাচ্ছে। এগুলো হলে কক্সবাজারে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে। এখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
কয়লাভিত্তিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল মারাত্মক হবে উল্লেখ করে সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজারে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুচ্ছ প্রকল্প। একই সঙ্গে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। এ ধরনের প্রকল্প থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ধনী দেশগুলোর দূষণের কারণে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু যেভাবে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুচ্ছ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ দ্রুত দূষণকারী দেশের তালিকায় নাম লেখাবে। এ ধরনের আচরণ সংবিধানে পরিবেশ সুরক্ষার যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার লঙ্ঘন।