দীর্ঘায়িত হচ্ছে পণ্য রফতানি খাতের বিপর্যয়

টানা পঞ্চম মাসের মতো সামগ্রিকভাবে পণ্য রফতানি আয় কমেছে। তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং হোম টেক্সটাইল খাতে রফতানিতে টানা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যান্য খাতের অবস্থাও নাজুক। শুধু পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিপণ্যে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে।

সব মিলিয়ে পণ্য রফতানি খাতে বিপর্যয় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। রফতানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার এসব তথ্য তুলে ধরেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ছাড়া পরবর্তী পাঁচ মাসে (আগস্ট-ডিসেম্বর) রফতানি আয় ও প্রবৃদ্ধি দুটোই কমেছে। একক মাস হিসেবে ডিসেম্বর মাসেও আয়ের লক্ষ্য অর্জন হয়নি। ছয় মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ২১২ কোটি মার্কিন ডলার। তার বিপরীতে আয় হয়েছে এক হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় রফতানি আয় ছিল দুই হাজার ৪৯ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এদিকে একক মাস হিসেবে শুধু ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ মাসে লক্ষ্য ছিল ৪০৭ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার। এ হিসাবে আয় কম পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

ইপিবির প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছয় মাসে নিটওয়্যার খাতে রফতানি আয় হয়েছে ৮২০ কোটি ডলার। আর ওভেন খাতে আয় ৭৮১ কোটি ডলার। তৈরি পোশাকের দুই খাতে আয় এসেছে এক হাজার ৬০২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৫৭ কোটি ডলার। আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে আয় কম হয়েছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৬১ শতাংশ।

এ ছাড়া কৃষিজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। সে ক্ষেত্রে ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। হিমায়িত খাদ্য ও মাছ খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২৯ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য খাতে ছয় মাসে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় বেশি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এর বাইরে কেমিক্যাল পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ১৯ দশমিক শূন্য ৯৫ শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৩ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ডলার। আয় কম হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানি আয় তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই অর্ডার কমছে। সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে নিুগতি রয়েছে। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) পণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। এবার এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।