দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ হয় সমুদ্রপথে। দিন দিন বাড়ছে এ পথে আমদানি-রপ্তানি। বিপুল মুনাফার সম্ভাবনা থাকায় সমুদ্র পণ্য পরিবহন ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে মেঘনা, কর্ণফুলী ও বসুন্ধরা গ্রুপ বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে।
সমুদ্রে পণ্য পরিবহনের জন্য গ্রুপ তিনটির বহরে যুক্ত হয়েছে ১১টি জাহাজ। এর মধ্যে মেঘনা গ্রুপের বহরে পাঁচটি, কর্ণফুলী গ্রুপের বহরে চারটি ও বসুন্ধরা গ্রুপের বহরে যুক্ত হয় দুটি জাহাজ। এতে তাদের বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। আরও কয়েকটি জাহাজ এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মূলত এত দিন বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্দা, জাহাজ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক), পাঁচ শতাংশ এটিআই ও ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট করের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিলেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবে বর্তমানে সরকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারসহ নানা সুবিধা দেয়ায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। দুই বছর আগে যেখানে দেশীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ ছিল ৪০টির মতো, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৪টি।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে নিবন্ধিত হওয়া মোট ১১টি জাহাজের মধ্যে মেঘনা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও সিড ক্রাশিং মিলের বহরে ৩৫ হাজার ২২ টনের মেঘনা প্রিন্সেস ও ৩২ হাজার ৯২৭ টনের মেঘনা সান, ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের বহরে ৩১ হাজার ৮৭৭ টনের মেঘনা লিবারিট ও ৩১ হাজার ৭৬১ টনের মেঘনা ফ্রিডম এবং মেঘনা সুগার রিফাইনারির বহরে ৩১ হাজার ৭৬১ টনের মেঘনা স্টার নামের একটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ যুক্ত হয়েছে। এই পাঁচটি জাহাজ নিয়ে মেঘনা গ্রুপের বহরে বর্তমানে সবমিলিয়ে ১২টি সমুদ্রগামী জাহাজ আছে।
কর্ণফুলী লিমিটেডের বহরে যুক্ত হয়েছে সমুদ্রগ্রামী চারটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। এগুলো হলো এইচআর হেরা, এইচআর ফারহা, এইচআর আরাই এবং এইচআর রেহা। এগুলোসহ কর্ণফুলী গ্রুপের বহরে বর্তমানে মোট ছয়টি কনটেইনার পরিবহনকারী জাহাজ আছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের যুক্ত হয়েছে তেল ও গ্যাস পরিবহনকারী দুটি জাহাজ। এগুলো হলো বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের আমদানিকৃত গ্যাস পরিবহনের জন্য ৪৬ হাজার টনের বসুন্ধরা ওয়ারিয়রস এবং বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের তেল বা কেমিক্যাল পরিবহনের জন্য ৩০ হাজার টনের বসুন্ধরা মালিকা।
এ ব্যাপারে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। এ খাতের বিপুল পরিমাণে অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমাদের বিএসসির পাশাপাশি দেশীয় শিল্পগ্রুপ কবির গ্রুপ, মেঘনা, আকিজ, বসুন্ধরা, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি গ্রুপ এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এ বছর মোট ১১টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন ৭৪টি জাহাজ বাংলাদেশি পতাকাবাহী। আরও কয়েকটি জাহাজ যুক্ত হবে। তবে এসব জাহাজের বেশিরভাগই তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। আমরা বাংলাদেশে মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্সের কিছু অংশ সংশোধনের জন্য কাজ করছি, এটি হলে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের তালিকা আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে।’