আল-কারি’আহ শব্দটি কিয়ামতের একটি নাম

মোঃ আবুল কালাম :

 

আল কারিয়া এর বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য হচ্ছে কিয়ামত ও আখেরাত । সর্বপ্রথম লোকদেরকে একটি মহাদুর্ঘটনা ! বলে আতংকিত করে দেয়া হেয়েছে , কি সেই মহাদুর্ঘটনা ? তুমি কী জানো সেই মহা দুর্ঘটনাটি কী ? এভাবে শ্রোতাদেরকে একটি ভয়াবহ ঘটনা অনুষ্ঠিত হবার খবর শোনার জন্য প্রস্তুত করার পর দু’টি বাক্যে তাদের সামনে কিয়ামতের নকশা এঁকে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে , সেদিন লোকেরা আতংকগ্রস্ত হয়ে এমনভাবে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে যেমন প্রদীপের আলোর চারদিকে পতংগরা নির্লিপ্তভাবে ছুটাছুটি করতে থাকে। পাহাড়গুলো সমূলে উৎপাটিত হয়ে স্থানচ্যূত হবে । তাদের বাঁধন থাকবে না। তারা তখন হয়ে যাবে ধূনা পশমের মতো। তারপর বলা হয়েছে , আখেরাতে লোকদের কাজের হিসেব নিকেশ করার জন্য যখন আল্লাহর আদালত কায়েম হবে তখন কার সৎ কাজ তার অসৎকাজের চাইতে ওজনে ভারী এবং কার সৎকাজ তার অসৎকাজের চাইতে ওজনে হালকা , এরি , ভিত্তিতে সেখানে ফায়সালা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধরনের লোকেরা আরামের ও সুখের জীবন লাভ করে আনন্দিত হবে। আর দ্বিতীয় ধরনের লোকদেরকে এমন গভীর গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে যেগুলো থাকবে শুধু আগুনে ভরা।

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ﴾
الْقَارِعَةُ
১) মহাদুর্ঘটনা !১

﴿مَا الْقَارِعَةُ﴾
২) কী সেই মহাদুর্ঘটনা ?
﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ﴾
৩) তুমি কী জানো সেই মহাদুর্ঘটনাটি কি ?
﴿يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ﴾
৪) সেদিন যখন লোকেরা ছড়িয়ে থাকা পতংগের মতো
﴿وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنفُوشِ﴾
৫) এবং পাহাড়গুলো রং বেরঙের ধূনা পশমের মতো হবে৷ ২
﴿فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ﴾
৬) তারপর৩ যার পাল্লা ভারী হবে
﴿فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ﴾
৭) সে মনের মতো সুখী জীবন লাভ করবে
﴿وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ﴾
৮) আর যার পাল্লা হালকা হবে ৪
﴿فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ﴾
৯) তার আবাস হবে গভীর খাদ৷৫
﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ﴾
১০) আর তুমি কী জানো সেটি কি ?
﴿نَارٌ حَامِيَةٌ﴾
১১) ( সেটি )জ্বলন্ত আগুন৷৬

“কারি’আহ” এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, মহাবিপদ। কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে “কারি’আহ” এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, মহাবিপদ। কারা’আ মানে কোন জিনিসকে কোন জিনিসের ওপর এমন জোরে মারা যার ফলে তা থেকে প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এই শাব্দিক অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভয়াবহ দুৰ্ঘটনা ও বড় রকমের মারাত্মক বিপদের ক্ষেত্রে “কারি’আহ” শব্দ বলা হয়ে থাকে। [মুজামুল ওয়াসীত]

এখানে “আল-কারি’আহ” শব্দটি কিয়ামতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আবার সূরা আল-হাক্কায় কিয়ামতকে এই শব্দটি দিয়েই চিহ্নিত করা হয়েছে। [আয়াত: ৪] সুতরাং আল-কারি’আহ শব্দটি কিয়ামতের একটি নাম। যেমনিভাবে আল-হাক্কাহ, আত-ত্বাম্মাহ, আস-সাখখাহ, আল-গাশিয়াহ, ইত্যাদিও কিয়ামতের নাম। [আদওয়াউল বায়ান]

৪. সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত,  অর্থাৎ মানুষ সেদিনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিক্ষিপ্ততা, আনা-গোনা ইত্যাদিতে উদ্ভ্রান্তের মত থাকবে। মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পতঙ্গ।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল”। [সূরা আল-কামার: ৭] আগুন জ্বালানোর পর পতংগ যেমন দিক-বিদিক থেকে হন্য হয়ে আগুনের দিকে ছুটে আসে সেদিন মানুষ তেমনিভাবে হাশরের মাঠের দিকে ছুটে আসবে।

[ইবন কাসীর, কুরতুবী]

 

 লেখক  ও গবেষক