এখনো জিএসপি প্লাসের সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ

জিএসপি প্লাসের আওতায় পোশাক পণ্যে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার সুযোগ এখনো বাংলাদেশের আছে। গতকাল পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন আশা দেখিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

গতকাল পোশাক পণ্যের শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিনিধি দলের চেয়ার ও পার্লামেন্ট সদস্য হেইডি হাওতালা। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন জোসে ম্যানুয়েল গার্সিয়া-মার্গ্যালো, সোভেনসিমন, অ্যাগনেস জঙ্গেরিয়াস, জর্ডি ক্যানাস পেরেজ এবং ম্যাক্সিমিলান ক্রাহ। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির (আইএনটিএ) হেড অব ইউনিট মার্টি কালাউস এবং আইএনটিএ কমিটি প্রশাসক গ্যাব্রিয়েল আলভারেজ রেকারটে। বৈঠকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলিও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন সভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি মিরান আলী, সহসভাপতি (অর্থ) খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন, পরিচালক হারুন অর রশিদ, পরিচালক ব্যারিস্টার ভিদিয়া অমৃত খান, বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন আইএলও ইস্যুর চেয়ারম্যান এএনএম সাইফুদ্দীন। আরো উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাক পণ্যের শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, সহসভাপতি মো. আকতার হোসেন অপূর্ব।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় প্রতিনিধিদলের গুরুত্ব দেয়া বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ইপিজেড আইন সংশোধন। ইপিজেডের নিজস্ব পরিদর্শনের ধারাটি সংশোধন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রণয়নে পোশাক শিল্পমালিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পোশাক শিল্পমালিকরা শ্রমিকদের কালোতালিকাভুক্ত করে এমন অভিযোগের বিষয়টিও আলোচনায় তুলেছে ইইউ প্রতিনিধি দল। এছাড়া শ্রম আদালতে বিপুল পরিমাণ মামলা ঝুলে থাকাসহ কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়েও আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি দলে থাকা ইইউ পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির সদস্যরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী এমন তথ্য জানিয়ে বৈঠক সূত্র বলছে, এ বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে আলোচনা হলে ফলপ্রসূ হতে পারে বলে পোশাক শিল্পের প্রতিনিধিরা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে। বৈঠকে আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল জিএসপি প্লাসের আওতায় পোশাক পণ্যের বাণিজ্য সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টি। এ সুবিধার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পণ্য ইইউর মোট আমদানির ৬ শতাংশের বেশি হলে একটি দেশ থেকে সে পণ্য প্রবেশে দেশটির রফতানিকারকরা বাণিজ্য সুবিধা পাবেন না। এ নিয়ম কার্যকর হলে বাংলাদেশী ওভেন ও নিট পোশাক এবং হোমটেক্সটাইল পণ্যের কোনোটিই বাণিজ্য সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকায় থাকার সুযোগ থাকবে না। এ বিষয়ে এখনো বাংলাদেশ আশা করতে পারে বলে জানিয়েছেন ইইউ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল।

জানতে চাইলে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বণিক বার্তাকে বলেন, বৈঠকে ভালো আলোচনা হয়েছে। জিএসপি প্লাসের বিষয়ে পুরোপুরি নেতিবাচক কিছু প্রতিনিধি দলের পক্ষ হতে বলা হয়নি। পোশাক খাতের এ সুবিধা পাওয়ার আশা এখনো আছে। বিল পাস হওয়া পর্যন্ত আমরা আশা রাখতেই পারি। প্রতিনিধি দলের কাছে দেশের পোশাক শিল্পের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিনিধিদল সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সফররত প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণের ক্ষেত্রে শিল্পের অগ্রগতিসহ শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করেন। তিনি আরো জানান, বিজিএমইএ সম্প্রতি তার টেকসই কৌশলগত রূপকল্প উন্মোচন করেছে, যার লক্ষ্য পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি এমনভাবে ত্বরান্বিত করা, যা টেকসই এবং অর্থনীতি, পরিবেশ এবং জনগণের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শ্রম অধিকার ও কল্যাণ ইস্যুতে আরো উন্নতির জন্য পোশাক শিল্প আইএলওর সহযোগিতায় সরকার কর্তৃক তৈরি করা রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে এক হয়েছে—জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা সময়ের সঙ্গে আরো শক্তিশালী হয়েছে। পোশাক শিল্পের উন্নতিতে সহযোগিতা প্রদানে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানিয়ে এলডিসি-পরবর্তী যুগেও ইইউ বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফারুক হাসান।