সঞ্চয়পত্রের বিক্রি তিন কারণে কমেছে

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমছে অস্বাভাবিক হারে। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কমেছে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং গত বছরের আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে কমেছে ৮৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমছে যাওয়ার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত বছরের আগস্টে সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকদের বিনিয়োগ বা কেনার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের আগস্টে বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি টাকায়। ওই সময়ের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বা ৮৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে জুলাই-আগস্টের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রি কমেছে ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে নিট বিক্রি কমেছে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমার পেছনে তিনটি কারণকে শনাক্ত করা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে— প্রথমত, দেশের অর্থনৈতিক মন্দা, কর্মসংস্থানে ভাটা আয় কমে যাওয়া, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহের পর মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা থাকছে না।
যে কারণে মানুষ সঞ্চয়মুখী হওয়ার প্রবণতা কমিয়েছে। এ কারণে শতভাগ নিরাপদ থাকার পরও সরকারি খাতের সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। দ্বিতীয়ত, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তি হওয়ায় পরিশোধ বেড়েছে এবং তৃতীয়ত, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে সরকার থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানো চেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত এ তিন কারণেই সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে।
এদিকে সঞ্চয়পত্রের ব্যুরো অফিসগুলোয় সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য যেসব গ্রাহক আসছেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে গ্রাহক আসছেন কম বরং আগের চেয়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। ফলে সরকারকে ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রকে একধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবেও দেখা যায়। কারণ, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত অনেক সরকারি কর্মী সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকেই সংসারের ব্যয়নির্বাহ করেন।
সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে গ্রস হিসাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার। এর মধ্যে আগে বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের মূল অর্থ ও সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ফলে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার। গত আগস্টে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকার। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কমেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা বা ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের আগস্টে বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি টাকায়। ওই সময়ের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বা ৮৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে নিট বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫৭২ কোটি টাকার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে এর বিক্রি কমেছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার বা ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ে সঞ্চয়পত্রের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। এখন স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায়। আলোচ্য সময়ে এর স্থিতি কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গ্রস সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমেছে। যে কারণে স্থিতিও কমে গেছে। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে ঘাটতি হয়েছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ওই টাকা সরকার অন্য খাত থেকে ঋণ করে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধ করেছে।