পিস্তল ঠেকিয়ে স্বাক্ষর, মুক্তিপন দাবী ও হত্যার চেষ্টা
ফারইস্ট লাইফের চেয়ারম্যান-সিইওসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পিস্তল ঠেকিয়ে স্বাক্ষর চেষ্টা, অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে জখম, হত্যার করতে লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে রক্তাক্ত, মুক্তিপন দাবী এবং  মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, সিইওসহ ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

নির্যাতিত সাবেক কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪২, ৩৪৭, ৩৪৮, ৩২৩, ৩২৫, ৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগী মো. শাহাদাৎ হোসেন আকন্দ জানান, তিনি ১৩ বছর ফারইস্টে চাকরির পর বর্তমানে প্রাইম ইসলামী লাইফে কর্মরত। ৮ সেপ্টেম্বর পাওনা বেতনের বিষয়ে জানতে তিনি সহকর্মীসহ ফারইস্ট টাওয়ারে গেলে চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মুকাদ্দেছ হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের ওপর চড়াও হন। লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ১৮ তলায় আটক রাখা হয় প্রায় ৭ ঘণ্টা।

অভিযোগে বলা হয়, সেখানে উপস্থিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মুকাদ্দেছ হোসেন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নির্দেশে একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের ওপর অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হামলা চালান।

শাহাদাৎ হোসেন জানান, তাকে ও নজরুল ইসলামকে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে তারা দুজনকে ১৮ তলার একটি কক্ষে অবৈধভাবে ৬-৭ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আটক অবস্থায় তাদের ওপর লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়, মোবাইল ফোন, নগদ ৩০,০০০ টাকা, এবং একটি স্বর্ণের আংটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি তাদের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করা হয় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

ঘটনার একপর্যায়ে শাহাদাৎ হোসেন তার চাচা রুহুল আমিন আকন্দকে বিষয়টি জানালে তিনি শাহবাগ থানায় ফোন করে সহায়তা চান। পরে এসআই ফয়সাল নেতৃত্বাধীন পুলিশ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহাদাৎ ও নজরুল ইসলামকে উদ্ধার করে এবং তাদের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে শাহাদাৎ হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় কিছুটা বিলম্বে থানায় এজাহার দাখিল করেন। ঘটনায় শাহাদাৎ হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় মামলা করেন (নং-২৩)।

মামলার এজাহারে মোট ১৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন— চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মো. মুকাদ্দেছ হোসেন, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. মোবারক হোসেন, পরিচালক মো. হেলাল মিয়া ও মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অ্যাডিশনাল সিইও) মো. শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. আব্দুর রহিম ভুইয়া, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) কে. এম. সামছুদ্দিন, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি-উন্নয়ন) মো. হামিদুর রহমান আজাদ ও মো. মোস্তফা জামান হামিদি, ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোজাম্মেল হোসেন, (ভিপি-আইন ও রিয়েল এস্টেট বিভাগ) মো. আজগর আলী এবং (ভিপি-আইন বিভাগ) মো. জসিম উদ্দিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) ও চেয়ারম্যানের পিএস মো. এ.এস.এম. শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া (রুমন), এক্সিকিউটিভ অফিসার এ.কে.এম. শহিদুল হক, রিসেপশনিস্ট মো. ইউসুফ নবী, নিরাপত্তা প্রহরী মো. সাইদুর রহমান এবং সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. আব্দুর রাজ্জাক।

মামলা নিয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আইন ও রিয়েল এস্টেট বিভাগের ভিপি আজগর আলীর সাথে সাবেক কর্মকর্তা শাহাদাতের ঝামেলা হয়েছিল তবে সিইও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিল।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হাসানের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

পরে কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি এবং আমার কোনো পরিচালনা পর্যদের সদস্য ঘটনার দিন প্রতিষ্ঠানে ছিলাম না। শুনলাম যে, গত ৮ সেপ্টেম্বর আমাদের কোম্পানীর সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগত ৫০-৬০ জনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। বিষয়টি শাহবাগ থানায় অবগত করলে প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় থানা মামলা নেয়নি। পরে  প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আইন ও রিয়েল এস্টেট বিভাগের ভিপি আজগর আলী বাদী হয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর মামলা থেকে বাঁচতে প্রতিপক্ষরা আমাদের নামে মিথ্যা-কাল্পনিক অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় একটি কাউন্টার মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এটা পুরোটাই সাজানো মিথ্যা মামলা।

সম্প্রতি দুর্নীতি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আলোচনায় থাকা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এবার কর্মী নির্যাতনের অভিযোগ নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

সম্পর্কিত খবর