১১ টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সেয়ারদরে ভয়াবহ ধ্বস

গত এক মাসে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১১টি কোম্পানির শেয়ারদরে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ ধ্বস, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।

এই অপ্রত্যাশিত পতনে অসংখ্য বিনিয়োগকারীর মূলধনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ উধাও হয়ে গেছে। যারা সর্বস্ব দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তাদের চোখেমুখে শুধু অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।

  • যে ১১ কোম্পানি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত :
  • ফারইস্ট ফাইন্যান্স
  • সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • প্রিমিয়ার লিজিং
  • পিপলস লিজিং
  • এক্সিম ব্যাংক
  • ফাস ফাইন্যান্স
  • প্রাইম ফাইন্যান্স

এই কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করা ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের শেয়ারের দাম ২৫ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু কোম্পানি:

ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ারদর এক মাসেই প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে, কমেছে ৪৭.৮৩ শতাংশ। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পতনও কম ভয়াবহ নয়; ৩৮ শতাংশের বেশি কমে বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে মাত্র ৩ টাকা ৪০ পয়সায়। ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অবস্থাও একই রকম উদ্বেগজনক।

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং এবং পিপলস লিজিংয়ের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর কমেছে ৩১ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। প্রাইম ফাইন্যান্স ও ফাস ফাইন্যান্সের বিনিয়োগকারীরাও রক্ষা পাননি, এক মাসেই তাদের মূলধনের প্রায় চতুর্থাংশ হারিয়েছেন।

অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের মুখোমুখি বিনিয়োগকারীরা

এই ১১টি কোম্পানির মধ্যে ৫টি ব্যাংক মার্জারের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে—কষ্টার্জিত টাকা কি তারা আদৌ ফেরত পাবেন, নাকি এই ক্ষতি মেনে নিয়ে তাদের জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সংকটময় মুহূর্তে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়নি।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ভাঙা স্বপ্ন

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে কষ্টার্জিত সঞ্চয় তুলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ার আশায়। কিন্তু গত এক মাসের এই ভয়াবহ ধস তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তাদের চোখে এখন শুধু হতাশার কালো মেঘ।

নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রত্যাশা

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে নীতিনির্ধারক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি টিকিয়ে রাখা শুধু তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, বরং পুরো শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য।

এই ধ্বস শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সম্পর্কিত খবর