এশিয়ার স্পট মার্কেটে বেড়েছে এলএনজির দাম

সাম্প্রতিক সময়ে স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। গ্রীষ্মকালীন মজুদ বাড়ানো ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপমুখী পাইপলাইনে সরবরাহ ঘাটতির ফলে এমনটা দেখা যায়। এ অবস্থায় শীতল জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বৃহস্পতিবার এশিয়ায় স্পট মার্কেটে প্রতি মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি দাম ছাড়িয়েছে ৩৮ ডলার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এলএনজি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রিপোর্ট এলএনজির সরবরাহ চেইনে বিভ্রাটের কারণে বাজারে বেশ অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোয় বাজারে এলএনজির প্রাপ্যতা সংকটের আশঙ্কা মূল্যবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইট।

বুধবার রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম জানায়, নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন হয়ে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ অনেকটাই সীমিত হয়ে আসছে। ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত ইস্যুতে পাইপলাইনটিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ৬৭ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ইতালিতে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কমে এসেছে ১৫ শতাংশ পরিমাণ।

চীনভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, ফ্রিপোর্ট এলএনজির সরবরাহ চেইনে বিভ্রাটের ফলে যে সংকট তা রাশিয়ার এলএনজি সরবরাহ ঘাটতির কাছে তেমন কিছু না।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে একটি অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে ফ্রিপোর্ট এলএনজির গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। উপসাগরীয় অঞ্চলে গ্যাসের বাজারে দৈনিক প্রায় ২ বিলিয়ন কিউবিট ফুট ফিডগ্যাস (এলএনজি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় ব্যবহূত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ করত কোম্পানিটি। এর আগে দুর্ঘটনার কারণে প্রাথমিকভাবে তিন সপ্তাহ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানায় ফ্রিপোর্ট এলএনজি। তবে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, পূর্ব ঘোষণার চেয়ে বেশি সময় ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে। এমনকি চলতি বছরের শেষ সময়ের আগ পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে না বলেও জানায় ফ্রিপোর্ট। এমন ঘোষণা প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজির দাম বাড়িয়ে তুলতে আরো বেশি প্রভাব রেখেছে।

বৃহস্পতিবার এশিয়ায় এলএনজির বাজার আদর্শ দ্য প্লাটস জাপান কোরিয়া মার্কারে (জেকেএম) আগস্টে সরবরাহের জন্য প্রতি এমএমবিটিইউর দাম দাঁড়ায় ৩৮ ডলার ৫৮ সেন্ট। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাটের তথ্যমতে, এটি ৯ মার্চের পর শীতল জ্বালানি পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম।

এদিকে এশিয়ার বাজারে এলএনজির বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক ব্যবহারকারীরা নিজেদের কার্গোগুলো সুরক্ষিত করতে চাইছে। ইউরোপের বাজারে গ্যাজপ্রমের সরবরাহ কমিয়ে আনা ও ফ্রিপোর্ট এলএনজির সরবরাহ বন্ধের কারণে এ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি আটলান্টিক অঞ্চলে প্রাকৃতিক জ্বালানিটির চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়া এটির প্রভাব এশিয়ার বাজারে ছড়িয়ে পড়ার ফলে সরবরাহ চেইনে আরো অবনিত ঘটবে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, আটলান্টিক অঞ্চলে সরবরাহ বিভ্রাটের একটি প্রভাব এশিয়ার বাজারে এসে পড়ে। যদিও আটলান্টিক অঞ্চল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস প্রবাহিত হয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপীয় অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ সীমিত হওয়ার মানে তারা এলএনজির চাহিদা পূরণে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করবে। তার মানে দাম এমনটা একটা পর্যায়ে উন্নীত হবে, যাতে এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজি ক্রয় পরিস্থিতি স্তিমিত হয়ে আসে।

এরই মধ্যে স্পট মার্কেটে এশিয়ার প্রান্তিক ক্রেতাদের অংশগ্রহণের হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এটি এলএনজির বাজার আদর্শ জেকেএমের উচ্চ মূল্যকে সমর্থন করার জন্য একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এলএনজির বাজারে নিয়ন্ত্রকরা শীতল জ্বালানি পণ্যটির দাম এমন একটি স্তরে নিয়ে যেতে চাইছেন, যাতে উচ্চ চাহিদা স্তিমিত হয়ে আসে এবং ইউরোপ অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।

চীনের একটি বাণিজ্যিক সূত্র জানায়, এলএনজির দাম বাড়ায় দেশটির কিছু এলএনজি আমদানিকারক তাদের কার্গোগুলোকে আবারো বিদেশে পাঠাতে উৎসাহী হয়ে উঠবেন। চীনে বেশকিছু অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন জারি করা হয়েছে। ফলে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যের চাহিদা এখন অনেকটাই কম।