এক দশকের সর্বোচ্চে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য

টানা দ্বিতীয় মাসের মতো বেড়েছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক। এ ঘটনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য ১০ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে এমনটা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটা দেখা যায়।

প্রতিবেদনে চলতি বছরের জন্য বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণও যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করে রোমভিত্তিক সংস্থা এফএও। ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমের জন্য ব্যবহার পূর্বাভাস চলতি বছরের উৎপাদন পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যাবে বলেও জানায় সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাপী বেশি বাণিজ্য হওয়া খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে তৈরি এফএওর মাসিক খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক তালিকায় সেপ্টেম্বরের সূচক ছিল ১৩০ পয়েন্ট, যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি ও চলতি বছরের আগস্টের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। আগস্টে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক ছিল ১২৮ দশমিক ৫ পয়েন্ট। এ সময়ে বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের দামও বেড়েছে ব্যাপক হারে। চীনের চাহিদা বৃদ্ধি ফসল উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় এমনটা হয়েছে।

আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এফএওর শস্যের মূল্যসূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ২ শতাংশ। আগস্টের তুলনায় গমের মূল্যসূচক ৪ শতাংশ ও গত বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় শস্যের মূল্যসূচকে এর প্রভাব পড়েছে। এ সময়ে শক্তিশালী চাহিদার বিপরীতে রফতানি সহজলভ্যতা হ্রাস পায়। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চাল ও ভুট্টার মূল্যও বেড়েছে। পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ভুট্টার মূল্য মাঝারি আকারে দশমিক ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। গত বছরের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৩৮ শতাংশ।

এফএওর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আব্দুলরেজা আব্বাসিয়ান জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উল্লেখযোগ্য শস্যগুলোর মধ্যে গম বেশি আলোচনায় থাকবে। কারণ দ্রুত দাম বাড়ার ফলে পণ্যটির চাহিদা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

সেপ্টেম্বরে উদ্ভিজ্জ তেলের বৈশ্বিক দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি এবং গত ১০ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকটের কারণে উদ্বেগ বৃদ্ধি ও শক্তিশালী আমদানি চাহিদার ফলে ভোজ্যতেলের মূল্যে উচ্চমাত্রার বৃদ্ধি লক্ষ করা যায় বলে জানায় এফএও। অক্টোবরের ভবিষ্যৎ বাজারমূল্যেও পাম অয়েলের দাম যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ পেয়েছে। এ সময়ে র্যাপসিড অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেলেও সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

সেপ্টেম্বরে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১১৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগস্টের তুলনায় ১ দশমিক ৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ইউরোপ ও ওশেনিয়ার মৌসুমি কারণ ও আমদানি চাহিদা বাড়ার ফলে দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মাখনের মূল্য এ সময়ে অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের তুলনায় বেশি বেড়েছে।

এ সময়ে চিনির বৈশ্বিক মূল্য বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে চিনির বৈশ্বিক মূল্যসূচক ছিল ১২১ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা আগস্টের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে চিনি রফতানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ ব্রাজিলে উৎপাদন ঘাটতির বিপরীতে আমদানি চাহিদা হ্রাসের ফলে চিনির মূল্য তেমনটা বৃদ্ধি পায়নি। এছাড়া ভারত ও থাইল্যান্ডে প্রত্যাশিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চিনির দামে উচ্চ প্রবৃদ্ধি মোকাবেলায় প্রভাব রেখেছে।

সেপ্টেম্বরে মাংসের বৈশ্বিক মূল্য পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সময়ে মাংসের মূল্যসূচক ছিল ১১৫ দশমিক ৫ পয়েন্ট। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

এফএওর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ২৮০ কোটি টন শস্য উৎপাদন হতে পারে, যা বিগত মৌসুমের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। গত মাসের করা পূর্বাভাস অনুযায়ী এর পরিমাণ ছিল ২৭৮ কোটি ৮০ লাখ টন। ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের ব্যবহার দাঁড়াবে ২৮১ কোটি ১০ লাখ টন।