২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম।
শনিবার এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে।’
তবে দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে দাবি করেছন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘দেশের জিডিপির আকার ও অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতি বছর বাড়ছে। তবে বিগত কয়েক বছরে যেখানে প্রায় ১০-১২ শতাংশ হারে বাজেট বাড়ানো হয়েছে, এবার বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশেরও (৪ দশমিক ৪২) কম।’
বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে অধিক মাত্রায় সরকারের ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে ও সতর্কতার সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের জন্য নজর দেয়া যেতে পারে।’
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো এবং উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করা প্রয়োজন।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনুৎপাদনশীল এবং অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ কমানোর পাশাপাশি বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি আরো শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গৃহীত কাজের গুণগত মান বজায় রাখা ও দক্ষতার সঙ্গে সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা জরুরি। পাশাপাশি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে যাতে করে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হয়।’
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম আমরা। প্রস্তাবটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ, নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হেলালী, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এন এস