৫০০ সিসির বাইক উৎপাদন ও বাজারজাতের পথ সুগম হচ্ছে

দেশে বর্তমানে ১৬৫ সিসি সক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত করার অনুমোদন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় উৎপাদকরা উচ্চসক্ষমতার মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এ ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল এ আমদানি নীতি আদেশের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। ফলে এখন থেকে দেশে উচ্চসক্ষমতার মোটরসাইকেল বাজারজাতের পথ সুগম হলো।

আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এ মোটরসাইকেলের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১৬৫ সিসির বেশি সব ধরনের মোটরসাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ। তবে পুলিশের ক্ষেত্রে ১৬৫ সিসির এ ঊর্ধ্বসীমার বিধান প্রযোজ্য নয়। আদেশে আরো বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহূত যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারবে। ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা এখন থেকে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল দেশেই উৎপাদন ও সংযোজনের পাশাপাশি বাজারজাত করতে পারবে।

এক দশক আগেও দেশে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও কম মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। তবে ভারতের বাজাজ, হিরো ও টিভিএস জাপানের সুজুকি, ইয়ামাহা ও হোন্ডা এবং স্থানীয় রানার ও ওয়ালটনের বিনিয়োগের ফলে খাতটির দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে। তাছাড়া যানজট বেড়ে যাওয়া ও রাইডশেয়ারিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রভাবেও মোটরসাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। সরকার ২০১৭ সালে আমদানি করা ও স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি দুই ধরনের মোটরসাইকেলের দাম ২০ শতাংশ কমানোর ফলে বিক্রি আরো বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে ৪ লাখ ৮৭ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৫ লাখ ৪৯ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে দেশের বাজারে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যার ক্ষেত্রেও। ২০১৯ সালে সংস্থাটিতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১ হাজার ৪৫২। তবে কভিডের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ২০২০ সালে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের সংখ্যা কমে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে এটি কিছুটা বেড়ে মোটরসাইকেলের নিবন্ধনের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৫২-এ দাঁড়িয়েছে।

দেশের বাজারে বাজাজ, হোন্ডা, হিরো, ইয়ামাহা, টিভিএস, সুজুকি ও রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বাজাজকে অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে টিভিএস, হিরো, সুজুকি ও ইয়ামাহা দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করেছে। সর্বশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছে জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডা। তারা ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড রানার তাদের কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে বিক্রি হওয়া মোটরসাইকেলের ৮০ শতাংশই দেশে তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদকদের মধ্যে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ইফাদ অটোজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইফাদ মোটরস দেশেই রয়েল এনফিল্ডের বাইক উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করছে।

দেশে এতদিন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সক্ষমতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো উচ্চক্ষমতার শৌখিন বাইক বাজারজাত করতে পারছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চক্ষমতার বাইক উৎপাদনের জন্য বেশকিছু বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব আসার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এ সীমাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমদানি নীতি আদেশে এ পরিবর্তন এসেছে।

যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশে উৎপাদন ও বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে কারখানা স্থাপনের জন্য ইফাদ মোটরস চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৩০ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। এ কারখানায় রয়েল এনফিল্ডের ৩৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ সিসির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন ও বাজারজাত করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু বলেন, রয়েল এনফিল্ডের সঙ্গে ইফাদের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় তারা বাংলাদেশে রয়েল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল বিপণন করবে। পাশাপাশি এ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল কারখানা স্থাপনের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এতদিন বাংলাদেশে ১৬৫ সিসির ওপর মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার সুযোগ ছিল না। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার বাধা দূর হওয়ার ফলে এখন অনেক কোম্পানি এ খাতে বিনিয়োগ করবে। সিসি সীমা ৫০০তে উন্নীত করায় ইফাদ মোটরস দ্রুততম সময়ের মধ্যে রয়েল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়তে পারবে বলে জানান তিনি।

মোটরসাইকেলস ডাটা ডটকমের পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৩৩ শতাংশ অংশীদারির ভিত্তিতে দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ। এর পরেই রয়েছে টিভিএস ও হিরো। জাপানের ব্র্যান্ড হোন্ডার বাজারও দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে ব্র্যান্ডটির বাজার অংশীদারি প্রায় ১১ শতাংশ।